ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ই-লাইব্রেরির প্রসার

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

ই-লাইব্রেরির প্রসার

ই-বুক, মানে ইলেকট্রনিক বুক। উন্নত বিশ্বে এখন বেশ জনপ্রিয় ই-বুক। এই বইয়ের সঙ্গে পরিচিত এখন অনেকেই। কম্পিউটারে, ল্যাপটপে তো পড়া যায়ই। আবার বই পড়ার জন্য ট্যাব অথবা ই-বুক রিডারের কাটতিও রয়েছে। কাগজের বই অপেক্ষা দামে সস্তা ই-বুক। কয়েক হাজার ই-বুক ছোট একটি ডিভাইসে সংরক্ষণ করা যায় বলে কাগজের বই অপেক্ষা অনেক হাল্কা, সর্বস্তরের পড়ুয়া বিশেষ করে ছাত্র এবং ভ্রমণকারীদের জন্য সুবিধাজনকও। ডিজিটাল বিশ্বে ই-বুক একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃত। নতুন প্রজন্মের কাছে ই-বুক ধারণাটি শুধু বইকে সহজলভ্য করে তোলেনি, বইকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে ই-বুকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। বলা হয়ে থাকে, ই-বুকের উত্থান গত কয়েক দশকের পাঠাভ্যাসের ক্ষেত্রে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যস্ত সময়ে বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে ই-বুক পড়ার সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতেই নতুন এক পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করেছে। ১৯৭১ সালে প্রজেক্ট গুটেনবার্গের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক বই বা ই-বুকের যাত্রা শুরু হলেও বাংলাদেশে ই-বুক ধারণাটি ততটা জনপ্রিয় লাভ করেনি। এর পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। যেমন দেশে এখনও দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সুবিধা সহজলভ্য হয়নি। কম্পিউটার ছাড়া অন্য যেসব মাধ্যমে ই-বুক পাঠ করা সম্ভব তেমন যন্ত্রগুলোও সহজলভ্য নয়। তাছাড়া যে ব্যবহারকারীরা ইতোমধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে ই-বুক সরবরাহের সংগঠিত উদ্যোগ এ যাবত আসেনি। তদুপরি দেশে কোন স্বীকৃত অনলাইন লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় বাণিজ্যিক উদ্যোগে ই-বুক সরবরাহের পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। তবে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে সরকারীভাবে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলোর ই-সংস্করণ প্রকাশের ফলে ই-বুক ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নয়া প্রজন্মের কাছে। সরকারের প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উদ্যোগে এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ অবশ্যই। তবে ই-বুকের উদ্যোগ পাঠ্যগ্রন্থে সীমাবদ্ধ থাকছে, তা নয়। দেশে ই-লাইব্রেরিও গড়ে উঠছে। দেশের ১২৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিকে ই-লাইব্রেরিতে রূপান্তর করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, পর্যায়ক্রমে অন্য লাইব্রেরিগুলোও এর আওতায় আনা হবে। গুটেনবার্গ, এ্যামাজান, গুগলসহ ই-বুক প্রস্তুত। বিতরণ ও বিক্রয়কারী সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে লাখ লাখ ই-বুক তৈরি করেছে। ই-বুকের এ বিপুল সম্ভারে বাংলা বই নেই বললেই চলে। ডিজিটাল বিশ্বে বাংলা বইয়ের সংস্থান বাড়াতে সরকারের অনেক করণীয় রয়েছে। উদ্যোগ নেয়া হলে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলোর ই-সংস্করণ অনলাইনে প্রচার হতে পারে। দেশের সমৃদ্ধ লাইব্রেরির মূল্যবান গ্রন্থগুলোকেও পাঠকের কাছে সহজলভ্য করার পদক্ষেপ নেয়াটা এখন সময়ের দাবি। শুধু তাই নয়, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বেসরকারী উদ্যোগও এক্ষেত্রে উৎসাহিত হতে পারে। বেসরকারী খাতে ই-বুক তৈরি ও বিক্রির ব্যবস্থা করতে হলে দেশে স্বীকৃত অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু হওয়া সঙ্গত। একটি বইনির্ভর ও পাঠ্যাভ্যাসে অভ্যস্ত নয়া প্রজন্ম সৃষ্টিতে এই উদ্যোগটি আগামীতে বিস্তৃত হবে। দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাভাষীরা অনায়াসে তাদের পছন্দের গ্রন্থ যাতে পাঠ করতে পারে, দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যায়গুলো শুধু নয়, জাতীয় আর্কাইভসও তাদের সংগৃহীত দুর্লভ, দুষ্প্রাপ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলোর ই-বুক ও ই-লাইব্রেরি তৈরি করে বাংলাভাষী পাঠককে জ্ঞানের জগতে পৌঁছে দিতে সহায়ক শক্তি হিসেবে দাঁড়াবেই। ডিজিটাল গ্রন্থের ভুবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য ই-লাইব্রেরি চালুর কাজটি অব্যাহত রাখা হলে দেশ ও জাতি তাতে উপকৃত হবেই।
×