ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

শঙ্খচিলের ডানায় বৈশাখ

প্রকাশিত: ০৭:১০, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

শঙ্খচিলের ডানায় বৈশাখ

চাপেই ছিলেন এতদিন। কেমন কাজ করলেন, দর্শকরা নেবে তো ঠিকঠাক; ভাবনা ছিল মাথায়। ‘যেহেতু বিগ বাজেটের ছবি, গল্পভিত্তিক ছবি, বড় নির্মাতার ছবি; তাই বাড়তি চাপ থেকেই যায়।’ কুসুম শিকদার মনে করেন এমনটাই। গল্পে স্কুল মাস্টারের স্ত্রী তিনি। বাস করেন ইন্দো-বাংলা সীমান্তে। ১২ বছর বয়সী কন্যাও আছে তার। নাম সাঁঝবাতি। ‘শঙ্খচিল’ দেশভাগের স্মৃতির গল্প। অসংখ্য সীমান্তবর্তী বাঙালির অনুভূতির গল্প। পরিচালক গৌতম ঘোষ। তার ছবিতে আগে যারা নায়িকা হয়েছেন, যেমন- শাবানা আজমি, রেখা, টাবু, শর্মিলা ঠাকুর, রুপা গাঙ্গুলি, চম্পা; একই তালিকায় এখন থেকে কুসুমও। ঠিক যেন- ক্যারিয়ারে বসন্ত এসেছে, ফুলে ফুলে ভরে গেছে মন। প্রাপ্তি কিন্তু আরেকটাও আছে। কুসুমের জন্মদিন ১২ এপ্রিল। এই দিনটাতেই হল কিনা শঙ্খচিলের প্রিমিয়ার! শূটিংয়ের সময় হঠাৎ করেই একটা ডাকনাম জুটে গেল কুসুমের। পুটলি। কেমন করে যেন জনপ্রিয়তাও পেয়ে যায় তা। শুরুটা করেছেন প্রসেনজিৎ স্বয়ং। বাকিরাও হয়তো ভেবে নিয়েছেন, ‘কুসুম’-এর চেয়ে ‘পুটলি’ই ঢের ভাল। কেন এই পুটলি নাম! আসলে, ‘ছবিতে আমার একদমই কোন মেকআপ ছিল না। নো মেকআপ এ্যান্ড নো মেকডাউন, এটা জিরো টাচ আপের। তারপরও আমার ছোট ছোট কিছু পাউচ টাইপের ব্যাগ থাকত। যাতে জুস, সানস্ক্রিন বা পানি; এসব রাখা হত। এ কারণেই আমরা শূটিং ইউনিটের সবাই লক্ষ্য করলাম যে, আমাকে বুম্বাদা (প্রসেনজিৎ) পুটলি নামে ডাকা শুরু করলেন।’ ব্যস। কলকাতার অনেকেই এখনও জানেই না যে, এটা কুসুমের সত্যিকারের ডাকনাম নয়। ভারতের অন্যান্য জায়গার চেয়ে কলকাতা অনেক আলাদা, অনেকটা আমাদের মতোই। সেজন্যই হয়তো ওখানকার পরিবেশটা খুব চেনা কুসুমের। কলকাতা যেন নিজেরই বাড়ি। আগেও গিয়েছেন বহুবার। বিজ্ঞাপন-মেগা সিরিয়ালের শূটিং করেছেন। ঘুরেও বেরিয়েছেন। টলিউডে প্রবেশ যে শঙ্খচিলের হাত ধরে, এটা মনেই হয়নি তাই। কাজ করেছেন সাবলীলভাবে, স্বচ্ছন্দে। প্রসেনজিৎকে পেয়েছেন বিপরীতে। ছিলেন গৌতম ঘোষের মতো নির্দেশক। স্বাচ্ছন্দ না আসে কী করে! যৌথ প্রযোজনার ছবির প্রয়োজনীয়তার পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন মত আছে প্রথম থেকেই। এখনও যে বিষয়টার স্পষ্ট কোন সুরাহা হয়েছে, তাও নয়। তবুও সময়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে এমন ছবির সংখ্যা। কুসুম শিকদার মনে করেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে এতটাই মিল যে, আলাদাভাবে দেখাই উচিত নয়। আসল জিনিস হল ব্যবসা। সেটাকে বাদ দিয়ে কিছু হতে পারে না। যৌথ উদ্যোগে ছবি হলে ভারত-বাংলাদেশ দু’জায়গাতেই মুক্তি পাবে। তাতে দুই ইন্ডাস্ট্রিরই লাভ। এপার-ওপারের দর্শকের কাছেও পৌঁছে যাবে ছবি। কলকাতার ছবি তো বাংলাদেশের মানুষেরা দেখতে ভালবাসেনই। তাই, এই যৌথ প্রয়াস নিঃসন্দেহে খুব ভাল। দেখা যাক। হোপ ফর দ্য বেস্ট!’ গান করতেন এক সময় তিনি। বেশ কয়েকটা মিউজিক এ্যালবামও বেরিয়েছিল। একটা বিউটি কনটেস্টে জিতে গিয়েই ডাক পেলেন অভিনয়ের। করলেন ‘লালটিপ’, ‘গহীনে শব্দ’। পুটলি কিন্তু লেখালেখিও করেন। ‘নীল ক্যাফের কবি’ তার কবিতার বই। বেরিয়েছে গত বছর। ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’ও জুুটেছে বইটির জন্য। অবশ্য, পুরস্কারটি রিসিভ করতে পারেননি নিজে। দুর্ভাগ্য। শূটিং ছিল গৌতম ঘোষের ইউনিটের সঙ্গে। এজন্য করা হয়নি আরও অনেক কিছুই। শঙ্খচিলের ব্যস্ততা শেষ আপাতত। উড়ছে এখন আপন মনে। উড়ছেন কুসুমও। উড়তে হবে আরও অনেক, ডানা মেলে দিগন্তে।
×