ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তমনা লেখক হত্যা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১০ এপ্রিল ২০১৬

মুক্তমনা লেখক হত্যা

মুক্তমনা লেখক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিম উদ্দিন খুন হলেন বুধবার রাতে। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নাজিম অনলাইনে জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা নিয়ে লিখতেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত-রাজাকাররাও ছিল তার লেখার লক্ষ্যবস্তু। হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে কোন বক্তব্য পাওয়া না গেলেও খুনের ধরন দেখে ধারণা করা যায় এটি উগ্রপন্থীদেরই কাজ। একের পর এক তরুণ মুক্তচিন্তক হত্যার ঘটনা জনমনে হতাশা ও ক্ষোভের কারণ হয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পাঁচজন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট, ব্লগার ও প্রকাশক খুন হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মুক্তচিন্তার নৃশংস প্রতিপক্ষ, আত্মস্বীকৃত খুনীরা শুধু প্রকাশ্য রাজপথে নয়, বাসায় এবং কার্যালয়ে গিয়েও খুন করেছে। হামলার শিকার এবং হুমকিপ্রাপ্ত অনেক অনলাইন লেখকই প্রাণ রক্ষার্থে দেশের বাইরে চলে গেছেন। বিষয়টি বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য অস্বস্তিকর। ব্লগার বা অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট টার্মটি দেশব্যাপী বিশেষভাবে আলোচনায় উঠে আসে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আটক কাদের মোল্লার বিচারে ফাঁসির রায় না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট তথা ব্লগাররা শাহবাগে একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ করেন। পরে সেটি অভূতপূর্ব গণজাগরণের রূপ নেয়। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ ইতিহাস সৃষ্টি করে। সে সময়েই মৌলবাদী ও স্বাধীনতাবিরোধী চক্র অনলাইনে স্বাধীন মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাতে শুরু করে। ওই সময়েই অর্থাৎ ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মিরপুরে ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সেই শুরু। গত বছরের শেষদিকে রাজীব হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে যেসব কথা উঠে এসেছিল তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য গাইড লাইন হতে পারে। হত্যা মামলার মতো একটি মামলার যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য-প্রমাণ ও নথি আদালতে উপস্থাপন বিশেষ জরুরী। এক্ষেত্রে কোনরকম দুর্বলতা বা সীমাবদ্ধতা ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা আশা করব নাজিম হত্যার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির স্বার্থে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সচেতন থাকবে। এর আগে প্রকাশক দীপন হত্যার পরপরই আমরা উদ্বেগের সঙ্গে অভিমত প্রকাশ করেছি যে, মুক্তচিন্তার সপক্ষ শক্তি, সৃষ্টিশীল ও মননশীল লেখকবৃন্দ মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে আছেন। প্রকাশকরাও হুমকির বাইরে নন। দ্বিতীয়ত, হত্যাকারীরা সংঘবদ্ধ এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী একের পর এক হত্যাকা- সংঘটিত করলেও তারা প্রায় সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বলা সমীচীন, এ অবস্থা একটি সমাজের জন্য চরম বিপজ্জনক। যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের ওপর মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ ছায়া বিস্তার করে চলেছে। তাদের কাছে মানবতন্ত্র নয়, বড় হলো চাপাতিতন্ত্র। লেখার জবাব যারা লেখা নয় চাপাতির মাধ্যমে দিয়ে থাকে, তারা রাষ্ট্রের আইন মানে না। তাই রাষ্ট্রকেই উদ্যোগী হয়ে তাদের অপতৎপরতা রোধ করতে হবে। শিকড়সুদ্ধ তাদের উপড়ে ফেলা চাই সভ্যতার স্বার্থে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার ধারাবাহিক মুক্তচিন্তক হত্যা থামাতে না পারলে সেটা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্যজনক। অন্ধ অপশক্তিকে উড়িয়ে দিয়ে মুক্ত মত ডানা মেলতে অপারগ থাকলে হাজার বছরের পরম অর্জন স্বাধীনতার অর্থ প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, যা আমাদের কারোরই প্রত্যাশিত নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা। নাজিমসহ সকল হত্যাকা-ের বিচার ত্বরান্বিত করা হোক। এতে করে খুনী চক্রও সতর্কবার্তা পাবে।
×