ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের কল্যাণের জন্য

প্রকাশিত: ০৩:৩৮, ৯ এপ্রিল ২০১৬

মানুষের কল্যাণের জন্য

মানবজীবনের সার্থকতা রয়েছে মানুষের উপকার সাধনে। মনীষীরা তাই মানবকল্যাণের জয়গানই গেয়েছেন। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। তাই তার চিন্তায় সহজাতভাবেই রয়েছে ইতিবাচকতা। স্বগোত্রের কাজে আসে এমন কিছুতে মানুষ তৃপ্তি ও তাৎপর্য খুঁজে পায়। রাজনীতির মূল লক্ষ্যও হওয়া উচিত মানবকল্যাণ। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য মানুষেরই একটি অংশের ভেতর কাজ করে যায় মানববিধ্বংসী প্রবণতা। রাজনীতির নামে চলে অপরাজনীতি। এই অপরাজনীতির হোতা যারা তাদের কাছে প্রধান হয়ে ওঠে আত্মসুখ ও ভোগবাদিতা। ফলে তারা মানুষের কল্যাণের জন্য নয়, সক্রিয় হয় মানুষকে কষ্ট দেয়ার তৎপরতায়। শুধু কি কষ্ট? তারা মানব হত্যার মতো গর্হিত কর্মকা-ে লিপ্ত হয়। এর উদাহরণ খুঁজতে গেলে আমাদের ইতিহাসের মহাসাগরে ডুবুরি হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। নিকট অতীতেই রয়েছে তার জলজ্যান্ত দৃষ্টান্ত। দেশের মানুষ ভোলেনি গত বছর মাসের পর মাস আগুনে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কলঙ্কজনক ঘটনা। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা দেশবাসী ভুলবে কী করে! কী ভীষণ অস্থির নৈরাজ্যকর বিপজ্জনক দিন গেছে জাতির জীবনে। দলীয় কর্মীদের কাছে ‘দেশনেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়ার হুকুমে হরতাল-অবরোধের নামে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নাশকতা চলে টানা তিন মাস। গোটা দেশ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের জনপদ। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা শুধু মানুষ পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনীতির ক্ষতি সাধনও ঘটে বিপুল পরিমাণে। একটি দেশের সরকার চাইলে লুটপাটের মাধ্যমে নিজ দলের আখের গোছাতে পারে। আবার সদিচ্ছা থাকলে মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারে। মানুষের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ দেশপ্রেমিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয় লুটপাটের রামরাজত্ব কায়েম করা। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পরিচালনাকারী দল যখন সরকার গঠন করে তখন সেই সরকারের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশাও থাকে অনেক। এটাও সত্য যে, জাতির পিতার কন্যা যে সরকারের প্রধান সেই সরকারের কাছে মানুষের দাবি ও প্রত্যাশা থাকে বিশাল। বুধবার বার্ন ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বক্তব্য প্রদান করেন তা দেশের মানুষের মনে স্বস্তি বয়ে আনবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। কোন বাধাবিপত্তি ও সমালোচনা তাকে মানবকল্যাণের পথ থেকে বিচ্যুত করতে সমর্থ হবে নাÑ এমন প্রত্যয়ও মিলেছে তার কথায়। মানুষের কল্যাণ একটি ব্যাপক বিষয়। মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোই বৃহত্তর মানবকল্যাণের প্রাথমিক পর্যায়। বাংলাদেশের মতো সীমিত আয়তন ও বিশাল জনসংখ্যার একটি দেশে জীবনধারণের ন্যূনতম শর্ত পূরণই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সরকার সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। এজন্য কিছু ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জিত হয়েছে। আর্তপীড়িতের সেবাদানের ব্যবস্থা করা মানবকল্যাণ ব্রতেরই একটি অনিবার্য সুন্দর দিক। দুস্থ ও সহায়সম্বলহীন মানুষের পাশাপাশি সীমিত আয়ের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ আমাদের আশাবাদী করে তোলে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, বর্তমান সরকার মানবকল্যাণের জন্য এমন কিছু পদক্ষেপ নেবে যা দেশের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে ভবিষ্যতের কল্যাণব্রতে প্রেরণা যোগাবে।
×