ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা সংশোধন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৬ মার্চ ২০১৬

ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা সংশোধন হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করদাতাদের উৎসাহ দিতে বছর পাঁচেক আগে চালু করা হয় ট্যাক্স কার্ড। বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (সিআইপি) সমান মর্যাদা ভোগ করেন ট্যাক্স কার্ডধারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা। কিন্তু সর্বোচ্চ করদাতা ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স কার্ড দেয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের শিল্পোদ্যোক্তা ও অন্যান্য খাতের করদাতারা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সব খাতের করদাতাদের যাতে ট্যাক্স কার্ডের আওতায় আনা যায়, সে লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা-২০১০ সংশোধনে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন করনীতি বিভাগের সদস্য। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকছেন অতিরিক্ত কর কমিশনার পর্যায়ের চার কর্মকর্তা। গত কয়েক বছরের ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কার্ডপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিভিন্ন উৎস কর কর্তনকারী। এসব প্রতিষ্ঠানের বড় একটা অংশ আবার জ্বালানি খাতের। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলো অনেক বেশি উৎস কর কর্তন করে। এতে করে বেসরকারী খাতের লিমিটেড কোম্পানিগুলো ট্যাক্স কার্ডের সুবিধা সেভাবে পায় না। সূত্রমতে, সব ধরনের শিল্পোদ্যোক্তা ও করদাতাদের ট্যাক্স কার্ডের আওতায় আনতে একটি শ্রেণীবিভাজন করা হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য এক ধরনের ক্যাটাগরি থাকতে পারে, যাতে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাক্স কার্ড পায়। এছাড়া যেসব ক্যাটাগরি হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে নারী উদ্যোক্তা, সরকারী প্রতিষ্ঠান ও কর্পোরেশন, ম্যানুফাকচারিং খাত, সেবা খাত, জ্যেষ্ঠ নাগরিক এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবী করদাতাদেরও শ্রেণীবিভাজনের আওতায় এনে ট্যাক্স কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হতে পারে। এ লক্ষ্যে গঠিত কমিটি নীতিমালাটি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি সুপারিশ প্রণয়ন করবে। এর পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের উর্ধতন এক কর্মকর্তা বলেন, ট্যাক্স কার্ড দেয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল করদাতাদের উৎসাহিত করা। কিন্তু করের বড় অংশ আসে উৎস কর থেকে। আর উৎস কর কর্তনকারী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রায়ত্ত অথবা বহুজাতিক। ফলে দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা পাচ্ছে না। এটা দূর করতেই এ-সংক্রান্ত নীতিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তদের তালিকা থেকে দেখা যায়, প্রতি বছর ঘুরেফিরে একই ধরনের প্রতিষ্ঠান এ সুবিধা পাচ্ছে। প্রতি বছর সর্বোচ্চ কর প্রদানকারী ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১০ ব্যক্তিকে এ কার্ড দেয়া হয়। সর্বোচ্চ করদাতা প্রতিষ্ঠানের তালিকার মধ্যে রয়েছে গ্যাস উত্তোলনকারী বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। এছাড়া রয়েছে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড, সিকিউরিটি প্রিন্টিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) ও বাপেক্স। তবে নীতিমালা পরিবর্তন হলে প্রায় ১০টি খাতের নাগরিকরা এ সুবিধা পাবেন। ট্যাক্স কার্ডধারীরা ভিআইপি মর্যাদাসহ সরকারী হাসপাতাল, রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ ও গণপরিবহন ভ্রমণের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। তাদের রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের মতো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এত দিন ব্যক্তিপর্যায়ে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ২৫০ কোটি টাকার বেশি কর প্রদানকারীরা ট্যাক্স কার্ড ও সম্মাননা পেয়েছেন। তবে নীতিমালা পরিবর্তন হলে এ বিষয়েও পরিবর্তন আসতে পারে। নির্বাচিতদের একটি ট্যাক্স কার্ড, ক্রেস্ট ও একটি সনদ দেয়া হয়। এগুলো বরাবরের মতোই থাকবে।
×