ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে

সাড়া নেই ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবে

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১৩ মার্চ ২০১৬

সাড়া নেই ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবে

রহিম শেখ ॥ বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কৃষকের নামে ১০ টাকার হিসাব সচল রাখতে ২০০ কোটি টাকার একটি পুনর্অর্থায়ন তহবিল চালু করলেও তাতে সাড়া মিলছে কম। কৃষকের এ্যাকাউন্টের বাইরে মুক্তিযোদ্ধা, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতাভোগী, ক্ষুদ্র জীবন বীমা গ্রহীতা, তৈরি পোশাক খাতে কর্মরত শ্রমিকসহ অন্যদের ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার এ্যাকাউন্টেও লেনদেন পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। এসব হিসাব টানতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এসব হিসাব চালু রাখতে নিয়মিত তথ্য ও নথি হালনাগাদ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া বছরের বেশিরভাগ সময় লেনদেন না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা বলেন, কৃষকের নামে প্রায় ১ কোটি এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু এ্যাকাউন্টে হয়ত লেনদেন একটু কম হয়। তবে এটা যাতে না হয় সে জন্য ২০০ কোটি টাকার একটি পুনর্অর্থায়ন তহবিলও আছে। এই তহবিল থেকে কৃষকদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষক যাতে এসব হিসাবে প্রয়োজনমতো লেনদেন করেন, সে জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া আছে। তবে কোন ব্যাংকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। তার মতে, শুধু কৃষকের এ্যাকাউন্টই নয়, সব ধরনের এ্যাকাউন্টের মধ্যেই কিছু কিছু এ্যাকাউন্টে লেনদেন কম হয়ে থাকে। কৃষি কর্মকা-ে সরকারী সহায়তার অংশ হিসেবে সরকার প্রদত্ত বিভিন্ন ভর্তুকিসহ অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালের শুরুতে কৃষকদের নামে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব খোলার ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত দেশের সুবিধাবঞ্চিতদের অর্থনীতির মূল ধারায় আনার মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যেই কৃষকদের জন্য এ হিসাব খোলার সুযোগ তৈরি করা হয়। পরে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যদেরও এ হিসাব খোলার সুযোগ দেয়া হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্মনিবন্ধন সনদ বা কৃষি উপকরণ সহায়তার কার্ড নিয়ে যে কোন সরকারী ব্যাংকে গিয়ে এ হিসাব খোলা যাবে। কোন ব্যাংক এসব হিসাবে ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ কিংবা কোন ধরনের চার্জ নিতে পারে না। জানা গেছে, দেশের ব্যাংকগুলোতে দিন দিন বাড়ছে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব। গেল বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ১০ টাকার কৃষকের এ্যাকাউন্ট দাঁড়িয়েছে ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৪৫২; যা একই বছরের জুন পর্যন্ত ছিল ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ৮৭৬টি। এতে তিন মাসে কৃষকের এ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৭৬টি। সরকারী মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি এ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় প্রচারের অভাবে কৃষক পুনর্অর্থায়ন তহবিলের ওই ঋণ সুবিধা সম্পর্কে জানতে পারছেন না। অন্যদিকে, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও উৎপাদন খরচ উঠে না আসায় বেশিরভাগ কৃষকের সঞ্চয়ের সামর্থ্য নেই বললেই চলে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারাও প্রচারের অভাবে সঞ্চয়ে তেমন আগ্রহী হন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষককে জোর করে ঋণ দেয়া বা সঞ্চয় করানো যাবে না। এ বিষয়ে কৃষককে সহজ ধারণা দিতে পারলেই তিনি নিজ থেকে ঋণ ও সঞ্চয় করতে ব্যাংকমুখী হবেন। এ জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে। তখন কৃষকের এ্যাকাউন্টেও লেনদেন বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কৃষকের নামে খোলা ১০ টাকার এ্যাকাউন্টের বাইরে অন্যদের নামে খোলা অন্যান্য ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার এ্যাকাউন্ট রয়েছে আরও ৬৪ লাখ। এসব হিসাব সচল রাখতে ২০১৪ সালের মে মাসে ২০০ কোটি টাকার একটি পুনর্অর্থায়ন তহবিল চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত কৃষকের নামে খোলা হিসাব পুঞ্জীভূত জমার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী ভর্তুকি ও বেতন জমার কাজে ব্যবহৃত হিসাব সংখ্যা মাত্র ১৩ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৮টি। অর্থাৎ কৃষকের নামে খোলা ৯১ লাখ এ্যাকাউন্টের মধ্যে ১৪ লাখেরও কম হিসাবে সরকারী ভর্তুকি ও বেতন সুবিধা ভোগ করেছে। এসব এ্যাকাউন্টে জমার পরিমাণ মাত্র ৩১ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনর্অর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা নিয়েছে এমন এ্যাকাউন্ট তথা কৃষকের সংখ্যা মাত্র ৪০ হাজার ৫৩৭ জন। এর বিপরীতে ঋণ গেছে ২১ কোটি টাকার মতো। বৈদেশিক রেমিটেন্স এসেছে আরও ১৫ হাজার ৮০৪ জনের এ্যাকাউন্টে। এর পরিমাণ ৩৬ কোটি টাকা।
×