ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফেসবুক প্রতারণা!

প্রকাশিত: ০৩:৩০, ৯ মার্চ ২০১৬

ফেসবুক প্রতারণা!

ফেসবুক বাংলাদেশে দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ এই যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারী। ফেসবুকের ব্যবহার মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে যেমন অবারিত করেছে, তেমনি বিকশিত করেছে জানার অধিকারকেও। পাশাপাশি ফেসবুকের অপব্যবহারও বাড়ছে। প্রতারক ও মতলববাজরা ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। ধর্মান্ধতা উসকে দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে এ জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি। সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অজান্তে ফেসবুকে ভুয়া আইডি খোলার প্রবণতা ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে চলেছে। ফেসবুক প্রতারণার প্রধান শিকার যে নারী তার প্রমাণ আরও একবার পাওয়া গেল সম্প্রতি। খুলনার এক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সম্প্রতি ফেসবুক প্রতারণার শিকার হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ খুইয়েছেন। তার অভিযোগ আমলে নিয়ে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে ঢাকায় প্রতারকচক্রের ১২ বিদেশী ব্যক্তিকে আটক করেছে। সাইবার অপরাধ তথা ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ এখন বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে তা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সন্দেহাতীতভাবেই এ পরিস্থিতি যে কোন দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইন্টারনেটে হয়রানির শিকার হওয়ার ঘটনা ছাড়াও হ্যাকারদের দখলে চলে যাচ্ছে অনলাইন এ্যাকাউন্ট, ই-মেইল, ওয়েবসাইট। সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, সামাজিকভাবে হেনস্থা হওয়া, সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি, এমনকি এসবের পরিণামে প্রাণনাশের নজিরও রয়েছে। এ কথা সত্য, ইন্টারনেট মানুষের সামনে খুলে দিয়েছে ভার্চুয়াল দুনিয়া। কিন্তু এর মাধ্যমেই সাইবার জগতে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা অপরাধ। এই প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অপরাধ সংঘটনের প্রবণতাও বেড়ে চলেছে। ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে ভুয়া এ্যাকাউন্টের বদৌলতে পাল্টে যাচ্ছে অপরাধের ধরনও। অনেকে নিজের পরিচয়কে গোপন রেখে নানা রকমের অপরাধে সক্রিয় হয়ে উঠছে এই ধরনের অভিযোগও নতুন নয়। সঙ্গত কারণেই এ পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে সাইবার ক্রাইম রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোন বিকল্প নেই। আশঙ্কার বিষয়, অভিযোগ এবং প্রমাণ সাপেক্ষে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হলেও ফের নতুন নামে আরেকটি এ্যাকাউন্ট খুলে অপকর্ম চালানো হচ্ছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে যদি অপরাধও বৃদ্ধি পায় তবে তা কোনভাবেই ইতিবাচক নয়। এক্ষেত্রে অপরাধ দমনে সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সময় এসেছে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষে সাইবার অপরাধ দমনে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া। ফেসবুক প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচতে নারীকে বিশেষ সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এটা অনস্বীকার্য যে, সম্পূর্ণ অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে গোপনীয়তা রক্ষা সাপেক্ষে একান্ত ব্যক্তিগত কথোপকথন (চ্যাটিং) ও ছবি বিনিময়ের বিশেষ সুযোগ রয়েছে ফেসবুকে। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন কিংবা নিঃসঙ্গ এবং দাম্পত্যে অসুখী ব্যক্তি সংগোপনে সম্পর্ক তৈরি করা এবং ব্লক অপশন প্রয়োগ করে মুহূর্তে তা থেকে বেরিয়ে আসার মতো প্রবণতায়ও জড়িয়ে পড়ছে। ফেসবুকে সম্পর্কের ক্ষেত্রে মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটেছে। এর পুরোটাই যে ইতিবাচক ও অগ্রসরতার পরিচায়ক এমন নয়। ভার্চুয়াল বা অদৃশ্যমান মিডিয়ায় সম্পর্ক গড়ে তোলার হাতছানি, বিশেষ করে বিদেশযাত্রার প্রলোভনকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখে অনুসন্ধানে ব্রতী হতে হবে। সময় এসেছে ফেসবুকের মাধ্যমেই ফেসবুক বিষয়ক প্রতারণা ও অন্য অপরাধ সম্বন্ধে সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণের।
×