ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এটিএম বুথে নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ০৩:১২, ৭ মার্চ ২০১৬

এটিএম বুথে নিরাপত্তা

চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ঝামেলা এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে এটিএম বুথ গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হয়ে উঠেছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও আবাসিক এলাকার কাছাকাছি, এমনকি অনেক গ্রামাঞ্চলে মানুষের একেবারে হাতের নাগালেই কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের এটিএম বুথ স্থাপন হওয়ায় অর্থ উত্তোলনে খুবই সুবিধা হয়েছে। অথচ সাম্প্রতিককালে অনেক বুথে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যাতে গ্রাহকদের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। শুধু গ্রাহক নয়, ব্যাংক কর্তৃপক্ষও দুর্বৃত্তের দুষ্কর্মের শিকার হয়েছে। এটিএম বুথে টাকা লোড করার সময় লুটেরারা আক্রমণ চালিয়ে টাকা ছিনিয়ে নিচ্ছে। সর্বশেষ বুধবার রাতে গাজীপুরে একটি বেসরকারী ব্যাংকের বুথে এ ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটে। অর্থ লোড করার সময় দুর্বৃত্তরা হানা দিয়ে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে এটিএম বুথ জালিয়াতির ঘটনাও। কয়েক মাস ধরেই জালিয়াতির ঘটনাগুলো আলোচনার শীর্ষে রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণের পরও জালিয়াতি বন্ধ না হওয়া এবং নানা তথ্যের আলোকে গোয়েন্দারা আশঙ্কা করেছিলেন এ ঘটনায় বিদেশী চক্রের হাত রয়েছে। জালিয়াতির ঘটনা ঘটাতে গিয়ে নৃশংস খুনের ঘটনাও ঘটেছে। অবশেষে গোয়েন্দাদের আশঙ্কা সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। জালিয়াতির ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক জার্মান বংশোদ্ভূত পোলিশ নাগরিক সম্প্রতি জালিয়াতি সংক্রান্ত যে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছে তাতে শুধু প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরাই নন, সাধারণ মানুষও স্তম্ভিত এবং হতবাক। ব্যাংক মানুষের অর্থ সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ফলে যে কোন মাধ্যমেই হোক না কেন, গ্রাহকের অর্থ খোয়া গেলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ওপরই বর্তায়। একটা বিষয় স্পষ্ট যে, প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহকের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে। অবকাঠামো, কার্ড ও তথ্যভা-ার নিরাপত্তায় উপযুক্ত প্রযুক্তির অনুপস্থিতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাবকেই দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জালিয়াত চক্র যেভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পেশাদারিত্ব ও দায়িত্বশীলতা আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংক মিলে ৯০ লাখের বেশি ব্যাংক কার্ড ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ লাখ ডেভিট আর ৫ লাখ ক্রেডিট কার্ড। দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৭ হাজার এটিএম বুথ রয়েছে। এ বাস্তবতায় যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না যায় অথবা নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয় তাহলে সেটা হবে দুঃখজনক। এটিএম বুথের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আটক করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত তাই করা জরুরী হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য শুধু প্রশাসনের ওপর নির্ভর করা কি যথেষ্ট হবে? এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকেও এটিএম বুথ যেখানে অবস্থিত সেখানকার অধিবাসীদের আস্থায় নিয়ে নতুন কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা জোরদারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব কর্মী, বিশেষত নিরাপত্তা রক্ষাকারী কর্মীদের ভেতর কেউ বুথ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কিনাÑ বিষয়টি খতিয়ে দেখাও দরকার।
×