ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাতৃভাষায় শিক্ষা মিলছে না ॥ শিশুরা স্কুলে যায় না

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৫ মার্চ ২০১৬

মাতৃভাষায় শিক্ষা মিলছে না ॥ শিশুরা স্কুলে যায় না

রাজশাহীর বরেন্দ্র মূলত সাঁওতালদের বসবাস। বরেন্দ্র অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির দু’টি পাঠশালা আছে। এগুলো হলো পবার দামকুড়া এলাকার বর্ষাপাড়া আদিবাসী গণপাঠশালা ও গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটের সুন্দরপুর আদিবাসী গণপাঠশালা। আদিবাসী নেতারা নিজ উদ্যোগে এ দু’টি পাঠশালা গড়ে তুলেছেন। এ এলাকার আদিবাসীরা তাদের সন্তানদের ওই স্কুলে পাঠায় লেখাপড়া শিখতে। সেখানে সরকারী পাঠ্যপুস্তকের সঙ্গে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির বই ‘হরহপন কোয়া কহিল পুঁথি’, ‘সিবিল শারম’সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির বই পড়ানো হয়। এ দু’টি পাঠশালা টিকে থাকলেও এর মধ্যে দেখা দিয়েছে বই সঙ্কট। এখন ‘হরহপন কোয়া কহিল পুঁথি বইটি কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। শুধুমাত্র আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় রচিত ‘সিবিল শারম’ বইটি পড়ানো হয়। বর্ষাপাড়া আদিবাসী গণপাঠশালার শিক্ষক গোপাল হেম্বন জানান, কোনমতে টিকে আছে স্কুলটি। জেলার পবা এলাকার আদিবাসী শিক্ষার্থী ভারতী মুর্মু, জোহান মাঝি, সুমিলা হাসদা, দেবেন হাসদা লেখাপড়া করেছে বর্ষাপাড়া আদিবাসী গণপাঠশালায়। অন্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা তাদের নিজ ভাষায় পড়াশোনার সুযোগ না পেলেও তারা পেয়েছে। এতে তারা আনন্দিত। তাদের মতে, বরেন্দ্র অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য আলাদা করে আরও স্কুল করা প্রয়োজন। তাহলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের সবাই লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা তাদের নিজের ভাষায় লেখাপড়া করতে চায়। কিন্তু সরকারীভাবে তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কোন পাঠশালা না থাকায় তারা পড়তে আগ্রহ দেখায় না। বরেন্দ্র অঞ্চলে ঘুরে দেখা মেলে, হাঁসুয়া হাতে রাস্তার পাশ দিয়ে কাদামাখা শরীর নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে ১০/১১ বছরের কিশোর। এক পাশের ক্ষেতে কাজ শেষে ফিরছে অন্য পাশে। নাম তার হারান মুর্মু। স্কুলে যাওয়ার সময়। কিন্তু সে মাঠে কাজ করছে কেন? জানতে চাইতে বলল- আমাদের স্কুল কোথায়? আমাদের ভাষা তো স্কুলে পড়ানো হয় না। তাই ভাল লাগে না। Ñমামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×