ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যাচারের জ্বলন্ত নমুনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মিথ্যাচারের জ্বলন্ত নমুনা

একুশ শতকে প্রবেশের মুখে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে, ক্ষমতাসীন জোটের কুশাসন; সমাজ জীবনে দুর্বৃত্তদের দুঃসহ দাপট, লুটপাট, হানাহানি, রক্তারক্তি, ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের জীবনকে বিভীষিকাময় করে তোলা। ক্ষমতায় বসে শাসককুল দেশজুড়ে ‘এথনিক ক্লিনসিং চালু করে। বিরোধীদলীয় নেতা কর্মীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে উচ্ছেদের সেই নির্মমতা মানুষ আজও ভুলে যায়নি। তাদের শাসনামলে দেশময় বোমাবাজি, কথায় কথায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিপক্ষকে শুধু দমন নয়, নিশ্চিহ্ন করার জন্য ‘অপারেশন ক্লিনহাটর্’ নামক মারণঘাতী কর্মসূচীর মুখোমুখি হতে হয়েছে গোটা জাতিকে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে, অর্থনৈতিক সমস্যায়। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনায় দেশময় এক অতি জটিল অবস্থার সৃষ্টি করেছিল। দেশে এসেছিল এক ঘোর দুর্দিন। আগুনের খেলা চলেছে দেশজুড়ে। বাড়িঘর পুড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুনের শিখা দাউ দাউ করেছে। ক্রোধের বহ্নিশিখায় মানুষের জীবন হয়ে উঠেছিল বিষময়। ভয়াবহ সেই সব দিনে শাসক শ্রেণী ও তার সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নারকীয় তা-ব চালিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছিল। দেশের এমন কোন এলাকা ছিল না যেখানে বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে নৃশংসতায় লিপ্ত হয়নি। ২০০১ সালের বাংলাদেশে ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সৃষ্ট নারকীয় উল্লাস আর বীভৎসতায় পূর্ণ দেশ। এসব নির্মমতার ঘটনা সংবাদপত্রে প্রকাশ করতে দেয়া হয়নি। বর্বর বোধশক্তিহীন গোষ্ঠীটি প্রতিপক্ষমুক্ত দেশ চেয়েছিল। তাদের বিবেকহীন সভ্যতাবিধ্বংসী কর্মকা-ের বীভৎস দৃশ্য দেখতে হয়েছে দেশবাসীকে। তারা দেশটিকে নিয়ে গিয়েছিল খাদের কিনারায়। চট্টগ্রামে অধ্যক্ষ গোপালকৃষ্ণ মুহুরীকে নির্মমভাবে হত্যার সেই চিত্র আজও মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। তাদের শাসনামলে দেশজুড়ে জঙ্গীবাদের বিকাশ ঘটে। আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে শাসকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে। সারাদেশে একযোগে চালানো হয় বোমা হামলা। জামায়াত-বিএনপি নেতাদের সরাসরি মদদে গড়ে ওঠা বাংলাভাই আর শায়খ রহমানের নেতৃত্বাধীন জঙ্গীগোষ্ঠী জেএমবির দোর্দ- প্রতাপ উত্তরবঙ্গবাসী দেখেছে। যে সব ঘটনাকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ভাষায়ই বলা যায়, তাদের সেই নৃশংস ঘটনা মানবতাবোধশূন্য অন্ধ হিংস্রতা ও বিকৃত পশুপ্রবৃত্তির নামান্তর। ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার ভারি পাথর দিয়ে জনগণকে চেপে রেখে চরমপন্থী জঙ্গী অন্ধশক্তির উত্থান ঘটানো হয়েছিল। দেশজুড়ে মানুষ পুড়িয়ে মারার সেই নারকীয়তা দেশবাসী আবার প্রত্যক্ষ করেছে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে। ক্ষমতার বাইরে থেকে ক্ষমতাসীনসহ জনগণের বিরুদ্ধে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা বর্ণনার ভাষা মেলে না। পেট্রোলবোমা মেরে জীবন্ত বাসযাত্রীকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যার ঘটনাগুলো এখন শিহরিত করে মানুষকে। বিএনপি-জামায়াত নেত্রীর নির্দেশে অবরোধ-হরতালের নামে মানুষ হত্যাসহ দেশ ধ্বংসের যে জঙ্গী তৎপরতা চালানো হয়েছিল। সেই নেত্রী আজ নিজেদের কুকীর্তি ঢাকা দিতে ক্ষমতাসীন দলের কাঁধে তা চাপিয়ে দিতে কসুর করছেন না। মিথ্যাচারের ডালি হাতে নিয়ে তিনি উচ্চকণ্ঠে নিনাদ তুলছেন, জাতির গোরস্তানের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, দেশে মধ্যযুগীয় কায়দায় যে রক্তপাত ঘটছে, ধর্মাচার ব্লগার মুক্তমনা প্রকাশকসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে যারা হত্যা করছে তা বিএনপির অভিন্ন আত্মা জামায়াতে ইসলামীর উদর থেকে জাত জঙ্গী সংগঠনগুলো ঘটাচ্ছে। জঙ্গীদের নৃশংসতায় বিএনপি-জামায়াতের কেউ ধরাশয়ী হয়নি, এমনকি জঙ্গীরা এদের রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দূরে থাক, এদের ক্ষমতাসীন করার জন্যই দেশকে অস্থিতিশীল করতে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। যাকে বেগম জিয়া পশ্চিমাদের মতো আইএসের কাজ বলে প্রচার করছেন। বেগম জিয়ার সর্বশেষ বিবৃতিটি মিথ্যাচারের আরেক জ্বলন্ত নমুনা হয়ে থাকবে।
×