ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যয় হবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে

এসডিজিতে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ইইউ

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এসডিজিতে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ইইউ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জাতিসংঘ ঘোষিত এ লক্ষ্যমাত্রায় এই প্রথম কোন সংস্থা বাজেট সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। চলমান সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের যেসব অংশ এসডিজির গোলের সঙ্গে যুক্ত সেগুলো ব্যয় করা হবে এই অর্থ। এক বছরের জন্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকার এ বাজেট সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই শিক্ষা খাতে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে। সেটি বাড়িয়ে হয়ত সামাজিক নিরাপত্তা খাতে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে ইআরডি এখনও পুরোপুরি কাজ শুরু করেনি। আশা করছি আগামীতে ইইউর বাজেট সহায়তা আরও অনেক বাড়বে। কেননা তারা দিন দিন বাজেট সহায়তা বাড়াচ্ছে। আমরা আশা করছি সামাজিক নিরাপত্তার মতো নতুন নতুন খাতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহায়তা বাড়াবে। আমাও চাচ্ছি বেশি বেশি বাজেট সহায়তা আসুক। বাজেট সহায়তার বিষয়ে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক আলোচনা সেরে ফেলেছে ইইউ। সোমবার তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সঙ্গে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলন এবং ইইউ এর রুরাল ডেভেলপমেন্ট বিভাগের প্রধান এবং ইইউ এর ফাস্ট সেক্রেটারি গনজালো সিরানোর নেতৃত্বে অন্য দুই সদস্য হলেন ইইউর সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার লাইলা জেসমিন বানু ও প্রোগ্রাম অফিসার ওয়াসিম আকরাম। ওই বৈঠকে বাজেট সহায়তা দেয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সেই সঙ্গে এসডিজির বাস্তবায়ন কার্যক্রম মূল্যায়ন ও পরীবিক্ষণের বিষয়ে সহায়তা করতে আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিনিধিরা। এক্ষেত্রে জিইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, এমডিজির বাস্তবায়ন কার্যক্রম সফলভাবে মূল্যায়ন করেছে জিইডি। এসডিজিরও মূল্যায়ন করতে সক্ষম সংস্থাটি। অতীতের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এসডিজির মূল্যায়ন করবে জিইডি। আলোচনার পর এ বিষয়েও সহায়তা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ইইউ প্রতনিধি দলের প্রধান। ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেট সহায়তা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। আইএমএফ অনেক আগে থেকেই বাজেট সহায়তা দিয়ে আসছে। এর সঙ্গে ইইউর বাজেট সহায়তা যুক্ত হলে অর্থনীতির জন্য ভাল হয়।কেননা বাজেট সহায়তা যত পাওয়া যাবে ততই ভাল। বৈঠক বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দলটি জানিয়েছে তারা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে প্রথমবারের মতো বাজেট সহায়তা দিতে চায়। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে তা হচ্ছে, সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে যেখানে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট করা আছে, যেমন অসাম্যতা ও ক্ষুধা দূরীকরণে এ বাজেট সহায়তার অর্থ ব্যয় করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে কম অংকের হলেও পরবর্তীতে এই সহায়তার পরিমাণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. আলম। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনে ১৯৩টি সদস্য দেশ ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা হিসেবে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা এসডিজি অনুমোদন করেছে। এই এসডিজি বাস্তবায়নে বিশেষ এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করছে সরকার। এতে প্রথমে নেতৃস্থানীয় মন্ত্রণালয় ঠিক করা হচ্ছে। তারপর নির্ধারণ করা হচ্ছে কোন মন্ত্রণালয় কোন কোন গোল বাস্তবায়নে কাজ করবে বা কৌশল প্রণয়ন করতে পারবে। বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ ৪৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সরাসরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের সঙ্গে যুক্ত। সেই সঙ্গে ছয়টি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও জড়িত রয়েছে এসডিসি বাস্তবায়নের সঙ্গে। এছাড়া ইতোমধ্যেই এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আহ্বায়ক করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন এবং নিয়মিতভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রণয়ন করে প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য দাখিল করবে। এ বিষয়ে মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি বলেন, এসডিজি বাস্তবায়নে একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রযুক্তির সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার। কেননা গত ১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব ঘটেছে। কিন্তু সেই তুলনায় মানুষের কারিগরি জ্ঞান এখনও সীমিত। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতাকে কাজে লাগাতে পারলে এসডিজির বাস্তবায়ন সহজ হবে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে এসডিজির লক্ষ্য উচ্চাভিলাসী। কিন্তু আমি তা মনে করি না। আমি বরং মনে করি এটি চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ নয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে এখন এসডিজির চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করতে পারবে। তিনি জানান, এসডিজি বাস্তবায়নের কৌশল বিষয়ে কাজ চলছে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের জুন মাসে অনুমোদন পায় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। এটি এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কৌশলপত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে বদলে যাবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। সেই সঙ্গে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর এবং এ খাতে বিনিয়োগকে উৎপাদনমুখী করার উদ্যোগ রয়েছে। এই কৌশলপত্রের মাধ্যমে বর্তমান চলমান প্রায় ১৪৫টি কর্মসূচীকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। তাছাড়া আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। আসছে জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী। নতুন কৌশলপত্রে যেসব বিষয় যুক্ত হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে, অতি দরিদ্রদের জন্য ভিজিএফ, টিআর, কাবিখা ও বয়স্ক ভাতাসহ যেসব কর্মসূচী রয়েছে, সেগুলোর ধরন ও কৌশলে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। কৌশলপত্রে যে বিষয়টির ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে, তা হলো ‘লাইফ সাইকেল’। জিইডি কৌশলপত্রে বলছে, ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে ‘লাইফ সাইকেল’ পদক্ষেপ ছাড়া কোন বিকল্প নেই। এজন্য জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মোট পাঁচটি লাইফ সাইকেল চালু করতে হবে। অতিদরিদ্র, ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রতিবন্ধী সবাইকে এই লাইফ সাইকেলে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
×