সারাবিশ্বে জঙ্গীবাদ উৎসাহিত করতে যারা ভূমিকা পালন করে আসছে তারা নিজেদের এই অপতৎপরতা আড়াল করার জন্য নানা ফন্দি-ফিকিরের আশ্রয় নেবেই। তারা তো চাইবেই বাংলাদেশ জঙ্গীবাদীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হোক। অস্থিতিশীলতার ঘটুক বিস্তার, সাম্প্রদায়িক হানাহানির ঘটুক প্রসার, মৌলবাদীদের থাবা হোক হিংস্র। এমন যারা চায় তারা নানাভাবে প্রচার-অপপ্রচার যে অব্যাহত রাখবে সেটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া যাতে দেয় সেজন্য পৃষ্ঠপোষকতাও করছে তারা। স্থিতিশীল বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলায় তারা যে তৎপর তা বিভিন্ন সময় তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণে উঠে এসেছে। জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক যেসব রাজনৈতিক ও সশস্ত্র সংগঠন বাংলাদেশে বিদ্যমান তাদের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ শুধু নয়, এসব অপকর্ম আড়াল করার প্রচেষ্টাও তাদের গ্রহণ করতে দেখা যায়। বিচার-বিশ্লেষণের কোন ধারে-কাছে যায় না পশ্চিমারা। অপরের মুখে ঝাল খাবার মতো গলা বাড়িয়ে দিয়ে অলীক বাক্যাবলী নির্গত করেন তারা।
মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকেও দেখা যায় চোখে চশমা এঁটে জ্যোতিষীর মতো ভবিষ্যদ্বাণী দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক মঞ্চেও আরোহণ করে অদ্ভুতুড়ে কথাবার্তায় মগ্ন হতে দ্বিধা করেন না। যা ঘটেনি, যার অস্তিত্ব নেই, তাকে সামনে এনে আতঙ্কগ্রস্ত করার পেছনে সাধারণ কোন ব্যাপার নেই। গূঢ় রহস্য তো অবশ্যই রয়েছে। যদিও তার অনেকটাই এখন আর লুক্কায়িত নয়। কারণ ইতোপূর্বে অন্য দেশেও একই পদ্ধতি তারা অবলম্বন করে এসেছে। ‘বাঘ আসছে, বাঘ আসছে’ বলে চিৎকার করে নিজেরাই বাঘের অনুপ্রবেশ ঘটায়। এসব করে অদ্যাবধি কোথাও সফল হয়েছে, তা নয়। অবশ্য ল-ভ- করে দেয়ার ক্ষেত্রে সফলতা তাদের শতভাগ। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তানজুড়ে তারা অস্থিতিশীলতা, হানাহানি, সংঘর্ষ, বীভৎসতা ছড়িয়ে দিয়ে ফায়দা লুটছে। কিন্তু বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাফল্যের ঝুলি তেমন নেই যুক্তরাষ্ট্রের। আর তা থাকার কথাও নয়। আর সেটাই প্রমাণ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাপ্রধান জেমস ক্ল্যাসার। দেশটির সিনেটে পেশ করা প্রতিবেদনে তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে যা বলেছেন তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। এটা করার পেছনে গোপন কোন অভিসন্ধি হয়ত রয়েছে তাদের। বাংলাদেশে আইএস রয়েছে বলে জোরেশোরে হাঁকডাক দিয়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। অথচ বাস্তবে এদের অস্তিত্ব নেই। হয়তোবা নীরব সমর্থক থাকতে পারে। অন্য যেসব জঙ্গী-সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে তাদের নৃশংস ও ঘৃণ্য তৎপরতার বিরুদ্ধে কোন উচ্চবাচ্য করে না পশ্চিমারা। কারণ হিযবুত তাহ্রীর, জেএমবি, আনসারুল্লাহ বাংলাটিমসহ সব জঙ্গী সংগঠনের উৎপত্তিই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর উদর হতে। যুদ্ধাপরাধী সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতের কর্মকা-ের কোন নিন্দা করা দূরে থাক, বরং জামায়াতকে ‘মডারেট ইসলামিক’ দল অভিধা দিয়ে তাকে এক ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে।
২০১৩ সাল থেকে অদ্যাবধি দেশী-বিদেশী প্রগতিশীল লেখক, বুদ্ধিজীবী হত্যার দায় স্বীকার করেছে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম, জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ প্রমুখ জামায়াত সৃষ্ট জঙ্গী সংগঠন। কিন্তু বিস্ময়কর যে, হত্যা সংঘটিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা প্রচার করে যে, এটা আইএসের কাজ। এতে স্পষ্ট হয়, ওরা বাংলাদেশে আইএসের প্রবেশ ঘটাতে চায়। দেশজুড়ে বিএনপি-জামায়াত, হেফাজতীরা মিলে যা করেছে ও করছে যুক্তরাষ্ট্র তার নিন্দা করে না। বরং এসব কাজ দমন করতে গেলেই উচ্চৈঃস্বরে গলা হাঁকায়, বিরোধী রাজনীতিকদের দমন করা হচ্ছে। বানোয়াট ভাষ্য দিয়ে সত্যকে আড়াল করতে চায়। ক্ল্যাসাররা চায় শান্তি ও স্থিতিশীল বাংলাদেশকে পর্যুদস্ত করে পরাজিত শক্তি জামায়াতের উত্থান ঘটিয়ে একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। কিন্তু তারা জানে না, বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসী গ্রুপের বিস্তার ঘটাতে মার্কিনী ভূমিকার বিরুদ্ধে প্রয়োজন জনসচেতনতা বাড়ানো ও বিশ্ব দরবারে তাদের মুখোশ উন্মোচন।
শীর্ষ সংবাদ: