ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাতৃদুগ্ধের শক্তি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

মাতৃদুগ্ধের শক্তি

মাতৃদুগ্ধের উপকারিতা সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। মায়ের দুধ শিশুর জন্য শুধু শ্রেষ্ঠতম পুষ্টিকর ও সঠিক খাদ্য নয়, বরং তা যে কোন রোগ প্রতিরোধক টীকার চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও কার্যকর। ডায়রিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, আর্থ্রাইটিস মিডিয়া, হারপিস ইনফেকশন, শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশন, নেক্রোটাইজিং, এন্টারোপ্যাথি ইত্যাদি রোগের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়া ছাড়াও কৃত্রিম ভ্যাকসিনের কাজ করে। কৃত্রিম শিশু খাদ্যে লালিত শিশুদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মাতৃদুগ্ধে লালিত শিশুর চেয়ে অনেক বেশি। এ সকল রোগ শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। এমনকি শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি অনেক গুণ বৃদ্ধি করে। মাতৃদুগ্ধ যে শুধু শ্রেষ্ঠতম পুষ্টি ও রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাসম্পন্ন, তাই নয়, বরং তা শিশুর জীবন রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সাশ্রয়ীও। মায়ের দুধ নবজাতকের জন্য আদর্শ পুষ্টিকর খাদ্য। এতে সংক্রামক ব্যাধির আক্রমণ অনেকটাই হ্রাস পায়। মায়েদের ক্ষেত্রেও স্তন এবং ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানো হলে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২২ শতাংশ কমানো সম্ভব। শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে বছরে ৩৭ হাজার নবজাতকের জীবন রক্ষা পায়। মায়ের দুধের খাদ্য উপাদানে বিশেষ ফ্যাটি এ্যাসিড রয়েছে, যা শিশুর বুদ্ধিদীপ্ততা ও চোখের তীক্ষèতা এবং জ্যোতি বাড়ায়। মায়ের দুধে এক শ’ দশটি উপাদান রয়েছে, যার প্রতিটি উপাদানই শিশুর জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। সন্তান জন্মদানের পর হলুদাভ ঘন যে দুধ বের হয়, সেই শালদুধ নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। এতে অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধক উপাদান ও শ্বেত কণিকা থাকে। এ উপাদান শিশুকে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষা করে। ইউনিসেফের এক হিসাব থেকে দেখা গেছে, বিশ্বের সকল নবজাতক শিশু ছয় মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করলে প্রায় ১৫ লাখ শিশুর মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হয়। মায়ের দুধের অতিরিক্ত পরিমাণ প্রোটিন এবং এ্যান্টিবডি নবজাতকের শরীরে প্রদাহ প্রতিরোধ করে। মায়ের দুধের এই প্রোটিন থেকে নতুন এ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হয়েছে, ওষুধ প্রতিরোধী রোগ-জীবাণু প্রতিরোধে এটি বিশেষ কার্যকর হবে। এতে রক্তশূন্যতা তথা সিকনসেল এ্যানিমিয়ার জিনগত রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে। সঞ্চার হয়েছে নতুন আশার। বিশ্বে ওষুধ প্রতিরোধী রোগ জীবাণুর আক্রমণে প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রচলিত এ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রোগ-জীবাণু নিজস্ব প্রতিরোধ গড়ে তুললে ওষুধগুলো কার্যকারিতা হারায়। তখনই প্রয়োজন হয় নতুন এ্যান্টিবায়োটিকের। তাই মায়ের দুধ থেকে তৈরি নয়া এ্যান্টিবায়োটিক এসব রোগ জীবাণু দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। লন্ডনের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি (এনপিএল) এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা এই এ্যান্টিবায়োটিকের নির্মাতা। মায়ের দুধে ল্যাকটোফেরিন নামের প্রোটিন থাকে। এটি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। এই জীবাণু রোধী সামর্থ্যরে বিষয়টিকে নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয়েছে নয়া এ্যান্টিবায়োটিক। গবেষকরা দেখেছেন যে, একটি সূক্ষ্ম কণাকৃতির উপাদানের কারণে ল্যাকটোফেরিন বিভিন্ন রোগ জীবাণুকে মেরে ফেলতে পারে এবং একে সামনে রেখে বিজ্ঞানীরা উপাদানটিকে কিছুটা পরিবর্তন করে ‘ক্যাপসুল’ তৈরি করেছেন। এটি মানুষের শরীরের কোন কোষের ক্ষতি না করেই সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারে। মায়ের দুধের শক্তি তীব্রতর, যা সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখে রোগপ্রবাহ থেকে। নয়া এ্যান্টিবায়োটিকও মানব মৃত্যু হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে আশা করা যায়। মাতৃদুগ্ধ নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন, যা মানবসন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। এটা বিশ্ববাসীরই চাওয়া-পাওয়া।
×