ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল রিচার্জ করে প্রতিদিন আয় এক শ’ টাকা

প্রকাশিত: ০৭:০১, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

মোবাইল রিচার্জ করে প্রতিদিন আয় এক শ’ টাকা

কিশোরী অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সামসুন্নাহারের মুদি-মনোহরি ও চায়ের দোকানের ব্যবসায় নতুন যোগ হয়েছে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা। মোবাইলে অন্তত তার দৈনিক লেনদেন হয় তিন হাজার টাকা। গ্রামীণ, বাংলালিংকসহ তিনটি কোম্পানির মোবাইল ফ্লেক্সিলোড করে এ কিশোরী। অন্তত দৈনিক এক শ’ টাকার আয় বেড়েছে সামসুন্নাহারের। দেড় বছর আগে ব্যবসায় নতুন সংযোজন মোবাইলে টাকা রিচার্জ। গ্রামের অনগ্রসর জনপদের সামসুন্নাহার উদাহরণ হয়ে গেছে। চতুর্থ শ্রেণীতে থাকতে সামসুন্নাহারের জীবন-যুদ্ধের পাশাপাশি শুরু হয় শিক্ষার জন্য যুদ্ধ। এ বছর অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে সে। শিশুটির ঘাড়ে টানা চারটি বছর চেপে আছে সংসারের বোঝা। বাবা-মায়ের অত্যন্ত আদরের সামসুন্নাহার। অদম্য এ কিশোরীকে কোন প্রতিবন্ধকতাই দমাতে পারেনি। ধানখালীর মাছুয়াখালী স্লুইস সংলগ্ন বাঁধে সামসুন্নাহারের এ জীবন-সংগ্রামের লড়াই। একটু দূরেই বসতবাড়ি। এমন ছিল না সামসুন্নাহারদের জীবন-সংসার। বড়বোন মারুফা, ছোট ভাই জাকারিয়া, বাবা সোহরাব খান আর মা মাকসুদাকে নিয়ে তাদের সংসারে অনাবিল সুখ না থাকলেও স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে বড় হওয়ার। সেই লেখাপড়া ঠিকই চলছে। কিন্তু কঠিন বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করে। বাবা নারায়ণগঞ্জে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছিলেন। ১১ বছর আগে হঠাৎ বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন সোহরাব। এরপরে অনেক টাকা খরচ করে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কোমর আর পায়ের হাড়ের আঘাত ভালো হয়নি। তাই বাড়িতে এসে বেড়িবাঁধের উপরে দোকান খুলে বসেন। দোকানের ব্যবসা থেকেই কোনমতে চলছিল সংসার। বাবাকে সাহায্য করতে করতে সামসুন্নাহারকে সেই থেকে এখন দোকানের সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিতে হয়েছে। আর অসুস্থ বাবা বাড়িতে পড়ে থাকেন। যখন পারেন একটু বসে সহায়তা করছেন। পুরো চারটি বছর ছোট্ট এই সামসুন্নাহার এভাবে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির ফাঁকে ফাঁকে সুযোগ পেলেই বই নিয়ে বসছে। এরই ফাঁকে খদ্দের সামলাচ্ছে। টাকাও রাখছে হিসেবান্তে। শুধু তাই নয় ব্যবসার পরিধিও ক্রমশ বাড়ছে। যোগ হয়েছে মোবাইলে টাকা রিচার্জের ব্যবসা। ছোট্ট এ কিশোরী খুব ঝটপট খদ্দেরদের মোবাইলে টাকা রিচার্জ করছে। সামসুন্নাহারের ভাষায়, ‘প্রথম প্রথম কয়দিন একটু বুঝতে সমস্যা অইছে। এরপর আর অয় না।’ চোখেমুখে যেন হাসির ঝিলিক লেগেই থাকছে ছোট্ট সামসুন্নাহারের। কিন্তু লেখাপড়ার নিয়ে কথা বলতেই ছোট্ট মুখাবয়ব থেকে হাসির ঝিলিক উধাও হয়ে যায়। Ñমেজবাহউদ্দিন মাননু কলাপাড়া থেকে
×