ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাটপণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে

প্রতি লিটারে ২২ টাকা বাড়ল জেবি অয়েলের দাম

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৮ জানুয়ারি ২০১৬

প্রতি লিটারে ২২ টাকা বাড়ল জেবি অয়েলের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আবারও বাড়ল জেবি অয়েলের দাম। সয়াবিন তেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির জুট ব্লেচিং অয়েল (জেবি অয়েল) মেশানো প্রতিরোধ করতেই এই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাটের আঁশ নরম করার এই তেলের দাম প্রতি লিটারে ২২ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে গত ৪ জানুয়ারি জেবি অয়েলের দাম বৃদ্ধি করে আদেশ জারি করা হয়েছে। এই দাম বৃদ্ধির ফলে প্রতি লিটার জেবি অয়েলের দাম ৬৮ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। দাম কম হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে সয়াবিন তেলে সঙ্গে জেবি অয়েল মেশায়। এটা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর প্রভাবে মানবদেহে পেটের পীড়া, চর্মরোগ, এমনকি মরণব্যাধি ক্যান্সারও হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পাটকলগুলোতে পাটের আঁশ নরম ও মসৃণ করতে জেবি অয়েল ব্যবহৃত হয়। এর আগেও জেবি অয়েলের দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু পাটকল মালিকদের বিরোধিতার মুখে সে সময় ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। তখন স্থগিত করা হয়েছিল ওই মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত। ওই বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রতি লিটার জেবি অয়েলের দাম ৬৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১০ টাকা করা হয়। ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে বলে পাটকল মালিকরা এ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। বিরোধিতার মুখে এক মাসের মাথায় (৩ মার্চ) দাম বৃদ্ধির আদেশ স্থগিত করে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। নতুন মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে খনিজসম্পদ ও জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার বলেন, ‘আমরা জেনেছি অসাধু ব্যবসায়ীরা সয়াবিন তেলের সঙ্গে জেবি অয়েল মেশায়। জেবি অয়েলের দাম কম হওয়া ও দেখতে অবিকল সয়াবিন তেলের মতো হওয়ায় তারা এ সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য জেবি অয়েলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ এর আগে ২০১৩ সালের ১০ জানুয়ারি জেবি অয়েলের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘নতুন মূল্য গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।’ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতি লিটার জেবি অয়েলের দাম ৬৮ টাকা ছিল। অন্যদিকে এখন খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৯০ টাকা ও বোতলজাত সয়াবিন তেল ১০০ টাকার কিছু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন জেবি অয়েলের দাম ৯০ টাকা হওয়ায় অসাধু ব্যবসায়ীরা তেলের সঙ্গে এটা মেশাতে আগ্রহী হবে না। মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, কোন পাটকল মাসে কত টন জেবি অয়েল পাবে এর কোন নীতিমালা নেই। ডিপো কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কোন কোন পাটকল মালিকরা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জেবি অয়েল নিয়ে তা তেল ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন। গত বছর খুলনা জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটিও এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছিল। বিপিসির একজন কর্মকর্তা বলছেন, দেশে জেবি অয়েল বিক্রির পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে। কিন্তু দেশে পাটজাত পণ্য উৎপাদন ও রফতানি প্রতিবছরই কমছে। কিন্তু জেবি অয়েল তো পাটজাত পণ্য উৎপাদনেই ব্যবহৃত হয়। জানা গেছে, দেশে ২৪৮টি পাটকল রয়েছে। এর মধ্যে বিজেএমসির পাটকল ২৬টি, বেসরকারী ১২৫টি ও ৯৭টি পাট-সুতাকল। জেবি অয়েলের চাহিদার সঠিক হিসাব না থাকলেও বেসরকারী পাটকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পাটকল এ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রতিবছর দেশের পাটকলগুলোতে প্রায় ৩০ হাজার টন জেবি অয়েলের চাহিদা রয়েছে। বিজেএমসি বলছে, তাদের পাটকলগুলোতে প্রতি মাসে ১২ লাখ লিটার জেবি অয়েল লাগে।
×