ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিক্ষোভ ॥ তদন্ত ও প্রতিকার দাবি

পাবনায় প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৪ মে ২০১৫

পাবনায় প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩ মে ॥ জেলায় সরকারী প্রাথমিক শিক্ষক বদলিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সরকারী নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে একটি চক্র শিক্ষক বদলিতে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বদলি বৈষম্যের শিকার শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর তদন্ত ও প্রতিকার দাবি করেছেন। জানা গেছে, মার্চ মাসের শিক্ষক বদলির সরকারী আদেশের পর পাবনা সদরে বাইরে থেকে ৫৪ জন ও উপজেলার মধ্যে ৪৫ শিক্ষককে বদলি করা হয়। এসব বদলিতে জ্যেষ্ঠতা, স্থায়ী বাসিন্দা, স্বামীর কর্মস্থলের ভিত্তিতে বদলির নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পৌর এলাকার সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষক লতা রাণী সরকার পৌর আলিয়া মাদ্রাসা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির আবেদন করেন। এখানে জুনিয়র তানজিরা পারভিনকে বদলি করা হয়েছে। জুনিয়র শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসকে পৌর নারায়ণপুর স্কুলে বদলি করা হয়েছে। এখানে আবেদন করেছিলেন সিনিয়র মাহমুদা আক্তার। শালগাড়িয়া স্কুলে সালমা খাতুনসহ অপর এক সিনিয়র শিক্ষক আবেদন করলেও জুনিয়র তাহমিনা ইয়াসমিনকে বদলি করা হয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী মজিবর রহমানের মেয়ে মনিরা সুলতানা সুজানগর উপজেলার স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়ে চাকরি পান। তাকে মজিবর রহমানের শহরের ঠিকানা দেখিয়ে কোমরপুর স্কুলে বদলি করা হয়েছে। সুজানগর উপজেলার মহব্বাতপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শারমিন আক্তারকে গয়েশপুর স্কুলে বদলি করা হয়। তার চাকরির বয়স ২ বর্ছও হয়নি। বদলির পূর্ব থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মেটারনিটি ছুটিতে আছেন, যা সরকারী নিয়ম বিরুদ্ধ। সদর উপজেলা চরতারাপুর স্কুলের ৫ শিক্ষকের মধ্যে ৩ জনকেই একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে। সুজানগর মহব্বাতপুর স্কুলেরও সহ-শিক্ষকের ৫টি পদের ৩ জনকেই একসঙ্গে বদলি করা হয়েছে। প্রতিস্থাপন না করে এ ধরনের বদলি আইন বিরুদ্ধ। জাহফুরুল আহসান শান্তর চাকরি স্থল মালিগাছা স্কুলে হলেও ৪ বছর ডেপুটেশনে শহরের কৃষ্ণপুর স্কুলে আনা হয়। তাকেও বদলি করে সাধুপাড়া স্কুলে আনা হয়েছে। সিনিয়র খুশি সরকার, শান্তি সরকার ও শিব শঙ্কর চক্রবর্তী শহরের মিলনসংঘ স্কুলে বদলির আবেদন করলেও তাদের না দিয়ে সঞ্জিতা খাতুনসহ অপর জুনিয়র ২ জনকে বদলি করা হয়েছে। সিঙ্গা স্কুলে হামিদা আক্তার সন্ধ্যাকে বদলি করা হয়েছে। এখানে সিনিয়র শিক্ষক সালমা খাতুনসহ অপর একজন আবেদন করেন। চকছাতিয়ানি, বিজয়রামপুর, আজিয়ারপাড়া, চকপৈলানপুর, বালিয়াহালট, আদর্শ গার্লস, পূর্ব রাঘবপুর, সাধুপাড়া, পুরাণ কুঠিবাড়ি স্কুলসহ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষক বদলি করা হয়নি। কিছুক্ষেত্রে দেখা গেছে, শহরে কেবল জায়গা কিনেছে এমন ঠিকানা দেখিয়ে, স্বামীর ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষা অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাইরে থেকে বদলি হয়ে আসা ৫৪ জনের মধ্যে ৪০ জনের কাগজপত্রই ভুয়া। এভাবে বদলিতে শিক্ষকদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী খোরশেদুল আলম, উচ্চমান সহকারী মজিবর রহমান, উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী আব্দুস সাত্তার, অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম এক দালালচক্রের সিন্ডিকেট শিক্ষক প্রতি ৪০-৬০ হাজার টাকায় এ বদলি বাণিজ্য করেছে। এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে যোগযোগ করা হলে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা লেনদেনের ঘটনা প্রকারান্তে স্বীকার করে বলেন, খোঁজ নিন আমি টাকা লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরাও জানিয়েছেন, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা টাকা লেনদেনে জড়িত না থাকলেও এ বদলিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয়েছেন।
×