এখনও এই বাংলাদেশে ঝাড়-ফুঁক, তাবিজ-তুমার, পানিপড়া, হেকিমি, কবিরাজি চিকিৎসার প্রথা ফুরোয়নি। একুশ শতকে এসে এবং স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছরেও চিকিৎসা খাতে বাংলাদেশ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। স্বাস্থ্যসেবার যথাযথ বিকাশ ঘটেনি। চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে শিক্ষার প্রসার ঘটছে, চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা সীমিত থাকায় বিদেশে যেতে হয়, যা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হবার সুযোগ দেশে সীমিত, তাই যাঁরা আছেন তাঁরাও হাতেগোনা। মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা হলেও বাংলাদেশে এখনও তা সবার জন্য পাওয়া সহজসাধ্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা ধরা যায় নামমাত্র। তাই সব মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা যায়নি আজও। বিত্তবানরা এমনকি মধ্যবিত্তরাও আজকাল উন্নত চিকিৎসা সুবিধা পেতে বিদেশ চলে যায়। দেশের চিকিৎসার প্রতি ভরসা কম-এমনটাই প্রচলিত। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতির কারণে ও যথাযথ চিকিৎসা না পাওয়ায় বিদেশমুখিতা বাড়ছে। এই অবস্থা নিরসনে প্রয়োজন চিকিৎসা শিক্ষার মানোন্নয়ন, চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ। দরকার চিকিৎসা ব্যবস্থাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া।
দেশে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য সরকারী কলেজ রয়েছে ২৩টি। আরও ৫টি চালু হচ্ছে। অথচ প্রয়োজন আরও বেশি। উন্নত শিক্ষার জন্য রয়েছে মাত্র একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির চাহিদা মেটাতে পারছে না। চিকিৎসা নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রের তাই প্রসার ঘটছে না। সরকার তাই আরও দুটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। দেশের দুই গুরুত্বপূর্ণ নগরী রাজশাহী ও চট্টগ্রামে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হবে। নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উদ্ভাবনার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন ঘটাতে সরকারের এই পদক্ষেপ জাতির দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ করবে, যা অভিনন্দনযোগ্য এবং দেশের জন্য সুসংবাদ। ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিসিন এ্যান্ড রিসার্চকে (পিজি হাসপাতাল) বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে চিকিৎসা খাতকে একধাপ এগিয়ে নেন। জনগণকে উন্নত চিকিৎসা ও সেবা প্রদানে আরও মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় দরকার। এতে তৈরি হবে আরও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, মানুষ পাবে আরও উন্নত চিকিৎসাসেবা।
শীর্ষ সংবাদ: