ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পুড়িয়ে গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১০ মার্চ ২০১৫

পুড়িয়ে গণহত্যা

গুটিকয়েক জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর হাতে জিম্মি দেশ ও দেশবাসীকে উদ্ধার করা আজ সর্বাগ্রে জরুরী। ঘোষণা দিয়ে মানুষ হত্যা চলছে, সম্পদহানি ঘটছে- অথচ প্রতিকারে নেই কোন আয়োজন। টানা ৬৫ দিন ধরে দেশে যে অবস্থা বহাল রাখা হয়েছে, তা থেকে পরিত্রাণ বা উত্তরণের কোন লক্ষণ দৃশ্যমান নয়। ঘাতকরা ঘোষণা দিয়ে, হুকুম দিয়ে মারণঘাতী আঘাত হেনেই চলছে। যে দেশের মানুষ পাখির ডাকে ঘুমিয়ে পড়ে, আবার পাখির ডাকে জাগে, সেই মানুষকে পেট্রোলবোমা মেরে কিংবা ধারালো অস্ত্রে কুপিয়ে খুন করা অব্যাহত রয়েছে। ঘাতকরা দিবারাত্র ষড়যন্ত্র আর নাশকতায় নানা পথের দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। শতাধিক মানুষকে তারা আগুনে পুড়িয়ে, নৃশংস যন্ত্রণায় অবশেষে সমাধিতে পাঠিয়েছে। আগুন জ্বেলে, বোমা মেরে মানুষ হত্যা যে কত সহজ গত ৬৫ দিনে দেশবাসী তা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করেছে। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণার পর থেকে অদ্যাবধি নাশকতা, সহিংসতাসহ গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার মহাসড়ক, জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে চোরাগোপ্তা বোমা হামলা ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিবোমা মেরে পুড়িয়ে দিচ্ছে যাত্রীসহ যানবাহন। এই ঘাতককুল পেশাদার বোমাবাজ ও বোমার কারিগর দিয়ে দেশজুড়ে বোমা তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। এই নাশকতাকারীরা একদিকে বোমাসহ ধরা পড়ে, অন্যদিকে জামিনে ছাড়া পায়। এই তাণ্ডব থেকে মানুষকে রক্ষা করার দায়িত্ব যাদের তারা মুখে যত বলেন কাজে তত পারদর্শী নয়। জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার মতো প্রশিক্ষণ যেমন নেই, তেমনি বিশেষজ্ঞও নেই দেশে। সন্ত্রাসীদের তা-বে ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। এই বোমাবাজদের হামলায় নিরীহ মানুষ, বাস ও ট্রাকচালক, হেলপার, যানবাহনে থাকা যাত্রী দগ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। দিনের পর দিন নাশকতা চলবে আর অসহায় জনগণ ভয়ের সংস্কৃতির ভেতরে সেঁধিয়ে আটক থাকবে- এই অবস্থা আর কাম্য নয়। বিএনপি-জামায়াত জোট ঘোষণা দিয়ে হত্যাকা-ে নেমেছে। লক্ষ্য সরকারকে টেনে-হেঁচড়ে নামানো, দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তোলা, অর্থনীতিসহ নানা দিক হতে এগিয়ে যাওয়া দেশকে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া তাঁর বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দায়ের করা দুর্নীতির মামলা থেকে রেহাই পেতে নাশকতার পন্থায় দলীয় ক্যাডার ও ভাড়াটে জঙ্গী গোষ্ঠীকে মাঠে নামিয়েছেন। তিনি আইনের উর্ধে নিজেকে মনে করেন। কিন্তু সততা এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে ও দুর্নীতি না করলে আদালতে হাজির হতে ভয় পাবেন কেন? মামলা মোকাবেলা করবেন। কিন্তু তিনি আদালতকে উপেক্ষা করে নাশকতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত করেছেন। সরকারী স্থাপনায়ও হামলা চালানো হচ্ছে। দু’মাসের বেশি সময় ধরে যা ঘটছে তা থেকে উদ্ধার পেতে মানুষ সরকারের ওপর ভরসা করছেন। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছেন দেশবাসীকে, আন্তর্জাতিকভাবে যেভাবে জঙ্গী সন্ত্রাসীদের বিচার হয় বাংলার মাটিতেও সেভাবেই হবে। সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গীবাদী তৎপরতার সঙ্গে জড়িতদের কাউকেই কোন ছাড় দেয়া হবে না। জনগণ বিশ্বাস করে, এসব কথার কথা নয়। কারণ যেভাবে গণহত্যা চালানো হচ্ছে, সেই হত্যাকারীরা আইনের বাইরে থাকতে পারে না। কিন্তু আরও মানুষ খুন হওয়ার আগেই দ্রুত ঘাতকদের শাস্তি নিশ্চিত করাই সময়ের দাবি।
×