ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

পাকিস্তানের পর এবার ভারতের নজর বাংলাদেশে, গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কী চায় দিল্লি?

প্রকাশিত: ১৫:৩২, ২৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৪, ২৮ জুন ২০২৫

পাকিস্তানের পর এবার ভারতের নজর বাংলাদেশে, গঙ্গা চুক্তি নিয়ে কী চায় দিল্লি?

ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে পানি ইস্যুতে নতুন মোড় নিচ্ছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক। ১৯৯৬ সালের ঐতিহাসিক গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি আজ আর কেবল একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা নয়, বরং হয়ে উঠেছে কৌশলগত চাপ প্রয়োগের এক উপাদান। পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু পানি চুক্তি কার্যত স্থগিত করার পর এবার ভারত নজর দিয়েছে বাংলাদেশের দিকে।

 

 

 

সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তি পুনর্বিবেচনার বার্তা পাঠানো হয়েছে। ভারতের দাবি, তাদের কৃষিকাজ, কলকাতা বন্দরের নাব্যতা এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৩০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ কিউসেক পানি প্রয়োজন। তাই দিল্লি মনে করছে, বর্তমান চুক্তি তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না।

সেই প্রেক্ষাপটে ভারত এখন ১০ থেকে ১৫ বছরের জন্য স্বল্পমেয়াদি ও পর্যায়ক্রমিকভাবে সংশোধনযোগ্য একটি নতুন চুক্তির প্রস্তাব ভাবছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি এক ধরনের কৌশলগত চাপ প্রয়োগ।

১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি বছর ১১ মার্চ থেকে ১১ মে পর্যন্ত ফারাক্কাবাদ পয়েন্টে গঙ্গার পানি ১০ দিন অন্তর ভাগাভাগি হতো। পানির প্রবাহ ৭০ হাজার কিউসেকের নিচে নেমে গেলে উভয় দেশ সমানভাবে ভাগ করে নিত। ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক হলে বাংলাদেশ পেত ৩৫,০০০ কিউসেক। এর চেয়ে বেশি হলে ভারত ৪০,০০০ রেখে বাকিটা দিত বাংলাদেশকে। তবে এখন ভারতের দাবি, এই ফর্মুলা তাদের প্রয়োজন মেটাতে পারছে না। ফলে চুক্তির ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে।

 

 

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা অনেকটাই গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানির উপর নির্ভরশীল। দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ চাষযোগ্য জমি এই পানির ওপর নির্ভর করে। পানির সরবরাহে সামান্য অনিশ্চয়তা হলেও খাদ্য উৎপাদন ও অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব পড়ে।

ফারাক্কাবাদের অবস্থান বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে, যা ভারতের জন্য একটি কৌশলগত সুবিধা। এখন ভারত সেটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার পথেই হাঁটছে। এদিকে ভারতের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম ও রংপুর করিডোরকে বাংলাদেশের "চিকেন নেক" হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে, যেমনটা বাংলাদেশ করেছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রসঙ্গে। এতে দুই দেশ এখন একে অপরের ভূরাজনৈতিক দুর্বলতাকে সামনে এনে চাপ প্রয়োগের কৌশল নিচ্ছে।

যে গঙ্গা একসময় ছিল বাংলাদেশ-ভারতের সেতুবন্ধনের প্রতীক, এখন তা ক্রমেই হয়ে উঠছে কৌশলগত অস্ত্র। দক্ষিণ এশিয়ায় যাদের হাতে নদীর উৎসধারা, তারাই এখন সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করছে।
২০২৬ সালে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া গঙ্গা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটিই নির্ধারণ করবে পরবর্তী ভূরাজনৈতিক সমীকরণ।
 

 

সূত্র:https://youtu.be/0F4No03RGVM?si=H7EisRF7uJad9R-S

ছামিয়া

×