
ছবি: সংগৃহীত
জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে অবশেষে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার রামডাঙ্গা গ্রামের স্বপ্নবাজ বৃদ্ধ মোঃ আব্দুল জব্বার (৬০)।
এক সময় যিনি ছিলেন ফেরিওয়ালা, সেই মানুষটিই এখন সমতল ভূমিতে কফি চাষ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তাঁর এই অদম্য প্রচেষ্টায় অনুপ্রাণিত হয়ে এখন আশপাশের অনেক কৃষক কফি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি নিজেই চারা উৎপাদনের মাধ্যমে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেছেন। মাত্র দুই বছর আগেও আব্দুল জব্বারের জীবনে ছিল কেবলই সংগ্রাম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ না থাকলেও ছিল প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি, আর আধুনিক প্রযুক্তি না জানলেও ছিল মাটির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক। সেই সাহসেই বাজিমাত করেছেন তিনি। এক সময়ের অনাবাদি জমিতে কফি চাষ করে এখন লাভবান হচ্ছেন এবং হয়ে উঠেছেন অন্য কৃষকদের প্রেরণার উৎস।
২০২০ সালে ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে জানতে পারেন, সমতল এলাকাতেও সীমিত পরিসরে ভারতীয় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ সম্ভব। সেখান থেকেই আগ্রহ জন্মে তাঁর। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে নিজ জমির মাত্র ৩০ শতক জায়গায় পরীক্ষামূলকভাবে কফি চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম দুই বছর ফলন খুব একটা না হলেও গাছের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আশার আলো দেখতে শুরু করেন। তৃতীয় বছর থেকে গাছে ফল ধরতে শুরু করে। প্রথম বছরেই সংগ্রহ করেন প্রায় ১৪ কেজি শুকনো কফি ফল (চেরি), যার স্থানীয় বাজারে চাহিদাও ছিল ভালো।
২০২৩ সালে তিনি তাঁর কফি খামারের পরিসর বাড়িয়ে নেন ১৫ শতাংশ জমিতে। বর্তমানে সেখানে রয়েছে প্রায় ১৫০টিরও বেশি কফি গাছ। প্রতিবছর তিনি সংগ্রহ করেন ৩০ থেকে ৩৫ কেজি কফি চেরি, যা শুকিয়ে হয় ২০–২৫ কেজি গ্রিন বীন (কাঁচা কফি)। স্থানীয় কয়েকটি কফি শপ তাঁর কফি সংগ্রহ করে, প্রতি কেজি শুকনো কফির দাম পান ৭০০–৯০০ টাকা পর্যন্ত। এতে বছরে তাঁর আয় দাঁড়ায় প্রায় ২০–২১ হাজার টাকা, যা প্রতিবছর বাড়ছে।
তবে, শুরুর সময়টা ছিল কঠিন। কফি গাছে রোগবালাই দমন, সঠিক ফল সংগ্রহ, শুকানো, রোস্টিং এসব বিষয়ে এখনও শিখছেন আব্দুল জব্বার। আরেকটি বড় সমস্যা বাজারজাতকরণ। যদিও এখন তিনি কাঁচা কফি বিক্রি করেন, ভবিষ্যতে নিজস্ব ব্র্যান্ডে রোস্টেড কফি বাজারজাত করার স্বপ্ন দেখেন।
স্থানীয় যুবক তানভির রহমান বলেন, আব্দুল জব্বার ভাইয়ের দেখে আমরা সাহস পেয়েছি। এখন আমরাও কফি চাষ শুরু করার জন্য চারা সংগ্রহ করছি।
আব্দুল জব্বার বলেন, আমি ভাবতাম, যদি এমন কিছু করি যা আলাদা, যাতে মাটির শক্তি ঠিকমতো কাজে লাগে, তাহলে কিছু একটা হতে পারে। এই বয়সেও যদি আমি পারি, তাহলে তরুণরাও পারবে। শুধু মাটির প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে তিনি নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মীর হাসান আল বান্না বলেন, “কফি চাষ আমাদের দেশে নতুন হলেও এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। আব্দুল জব্বারের মতো কৃষকদের আমরা সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তাঁকে আমরা মডেল কৃষক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।”
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সাধারণত কফি চাষ হয় পাহাড়ি অঞ্চলে, তবে এখন সমতল ভূমিতেও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ সফলতার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। আব্দুল জব্বার প্রমাণ করেছেন সাহস, পরিশ্রম ও সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
আসিফ