ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

পান পাতা প্রকৃতপক্ষে নগদ টাকা!

রানা হামিদ, বদলগাছী, নওগাঁ

প্রকাশিত: ২০:০১, ১৯ জুন ২০২৫

পান পাতা প্রকৃতপক্ষে নগদ টাকা!

ছবি:সংগৃহীত

পান চাষী কৃষকদের কাছে পান পাতা প্রকৃতপক্ষে নগদ টাকা। দিন দিন বদলগাছী উপজেলায় পান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। পান বিক্রি করে সপ্তাহে কৃষকের হাতে আসে মোটা অঙ্কের টাকা। স্থানীয়রা পান পাতাকে ‘নগদ টাকা’ হিসেবে গণ্য করে থাকেন। আসলে পান একটি লাভজনক ফসল। অন্যদিকে, দেহের ক্লান্তি, স্নায়ুবিক দুর্বলতা কাটানোসহ পানের বহুবিধ ব্যবহার প্রচলিত আছে আমাদের দেশে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৫২০ জন পানচাষী পাঁচ হেক্টর জমিতে পানের চাষ করছেন। সাধারণত ছায়াযুক্ত স্থান, বন্যামুক্ত উঁচু বেলে দোআঁশ বা এটেল মাটিতে পানের চাষ ভালো হয়। এ উপজেলার চাষীরা সাধারণত ঝালপানের চাষ বেশি করে থাকেন। এছাড়াও মিঠাপান, সাচিপান, রংপুরী পান, বারিপান-১, বারিপান-২, বারিপান-৩ চাষাবাদ হয়ে থাকে।

উপজেলার বালুভরা ইউপির শ্রী প্রকাশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, “বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা পান আবাদ করি। বর্তমানে আমি ও আমার ভাই বিকাশ চন্দ্র মন্ডল মিলে পান চাষ করি। আমাদের দুটি পানের বরজ আছে। একটি আট কাঠা এবং একটি ১০ কাঠা। একটি থেকে সপ্তাহে তিন দিন ছয় পোয়া (৬৪টি পান পাতায় হয় এক বিরা, ৩২ বিরায় এক পোয়া) এবং অন্যটি থেকে পাঁচ দিনে দশ পোয়া পান বাজারে বিক্রি করি। সব মিলিয়ে সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার টাকা আয় হয়। সপ্তাহে খরচ হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকা।”

প্রকাশ চন্দ্র আরো জানান, “আঠারো বছর আগে ১২ শতক জমিতে পানের চাষ শুরু করি। বাঁশ, খড়, চালান (বাঁশের বেড়া), নেট বাবদ মোট খরচ হয় ৬০ হাজার টাকা। প্রথমবার রোপণের ছয় মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়। এরপর থেকে সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন পান পাতা বিক্রি করা যায়। পানের লতা স্থানীয় এলু নামের ঘাস দিয়ে বেঁধে দিতে হয়। সাধারণত পান চাষের জন্য পরিচর্যাই বেশি জরুরি। মাঝে মাঝে খইল এবং সার দিতে হয়। বিশ থেকে পঁচিশ দিনের পানপাতা বিক্রির উপযোগী হয়। প্রকারভেদে প্রতি বিরা পান ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। মাকড় ও পচনে পান নষ্ট হয়। পৌষ-মাঘ মাসে পানের ফলন বন্ধ হয়ে যায়।”
গত বছরে দুটি বরজ থেকে প্রকাশ চন্দ্র ও বিকাশ চন্দ্র পাঁচ লাখ টাকার পান বিক্রি করেন।

পানচাষী মো. জাকির হোসেন বলেন, “২০২৩ সালের দিকে ১০ কাঠা জমিতে পান চাষ শুরু করি। জমি তৈরি করা থেকে শুরু করে পান বিক্রির উপযোগী হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছিল এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা। পান পাতা প্রথমবার রোপণের ছয় মাস পরেই বিক্রির উপযোগী হয়। এরপর থেকে সপ্তাহে চারদিন হাটে পান বিক্রি করি। সপ্তাহে দশ থেকে বারো হাজার টাকার পান বিক্রি হয়। আর সপ্তাহে খরচ হয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।”

তিনি আরো জানান, “পানের জমি এবং লতা প্রতিদিন পরিচর্যা করতে হয়। খইল, টিএসপি, জৈব, পটাশ ও ইউরিয়া সার পরিমিত পরিমাণে নিয়মিত প্রয়োগ করতে হয়। তিন মাস পরপর পানের লতা টেনে নিচে নামাতে হয়। পানের লতা কোনোভাবেই বাঁকা হতে দেওয়া যাবে না। আঠারো থেকে বাইশ দিন বয়সী পাতা বিক্রির উপযোগী হয়। উপজেলার বদলগাছী সদর, চাঁদপুর ও গোবরচাঁপা হাটে পান বিক্রি করা হয়। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তারা কোনো প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা পান না।”

তেজাপাড়া গ্রামের হাফিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আফরোজা বেগম ২০১৯ সাল থেকে পাঁচ কাঠা জমিতে পান চাষ করেন। দুজনে মিলেই জমির পরিচর্যা করেন। সপ্তাহে তিন দিন পান বাজারে বিক্রি করেন। আয় হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান এ বিষয়ে বলেন, “পান একটি লাভজনক ফসল। পান চাষে কোনো প্রণোদনা বা সরকারি সহযোগিতা আপাতত নেই। তবে আমরা প্রণোদনা বা অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য চেষ্টা করছি। পান চাষের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের পরামর্শ আমরা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দিয়ে থাকি।”
 

মারিয়া

×