ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ফতোয়া দিয়ে এক পরিবারকে ‘একঘরে’ করল মসজিদ কমিটি

মারুফুর রহমান, শেরপুর ॥

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১৩ জুন ২০২৫

ফতোয়া দিয়ে এক পরিবারকে ‘একঘরে’ করল মসজিদ কমিটি

অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে একটি পরিবারের বিরুদ্ধে ‘একঘরে’ ফতোয়া জারির অভিযোগ উঠেছে। শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর দরিপাড়া আইনুদ্দিন সরকার বাড়ি জামে মসজিদের কমিটি এই ফতোয়া দিয়েছে বলে দাবি করেছে ভুক্তভোগী পরিবারটি।

ফলে পরিবারটি ঈদুল আজহার নামাজে অংশগ্রহণ করতে পারেনি এবং মসজিদ থেকে সমাজের কোরবানির মাংসও পায়নি। এমনকি ওই পরিবারের দুই কন্যার স্বামীরা তাদের স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই মেয়ের সংসার ভাঙনের মুখে পড়েছে। বর্তমানে পরিবারটি মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সরেজমিনে গিয়ে এই প্রতিবেদকের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগীরা।

ওই পরিবারের গৃহকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, “মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের সমাজ থেকে ‘একঘরে’ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ঈদের নামাজে অংশ নিতে পারিনি। প্রতিবছর কোরবানির মাংস পেতাম, এবার পাইনি।”

রফিকুলের স্ত্রী মোছা: নাছিমা বেগম বলেন, “এলাকার দোকানে গেলে দোকানদাররা আমাদের কাছে কোনো পণ্য বিক্রি করে না। আমার স্বামীর সিএনজি গাড়িটি আগে মেম্বারের বাড়ির সামনে রাখত, এখন সেখানে রাখতে দেয় না।”

রফিকুলের দুই মেয়ে মোছা: রুমি আক্তার ও সুমি আক্তার বলেন, “আমাদের মা-বাবাকে একঘরে করার কারণে আমাদের স্বামীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমাদের সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে বিচার চাই।”

লছমনপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আইনাল হক বলেন, “ঈদের আগে ওই পরিবারে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদ কমিটি পরিবারটিকে একঘরে করে রেখেছে। এতে করে তাদের দুই মেয়ের সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সমাজ থেকে কাউকে একঘরে করে রাখার কোনো আইন নেই। পরিবারটি চরম সংকটে রয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় যেন তারা স্বাভাবিকভাবে বসবাস করতে পারে, সে ব্যাপারে অনুরোধ জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সহ-সভাপতি মো. ফরহাদ বলেন, “রফিকের স্ত্রী অনৈতিক কাজ করেছিল। এজন্য মসজিদ কমিটিসহ এলাকাবাসী সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে রফিকের পরিবারের কারও সঙ্গে কেউ কথা বলবে না। রফিক আলাদা থাকুক, আমরা আলাদা থাকব।”

শেরপুর জর্জ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল বলেন, “কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আইনগতভাবে কাউকে একঘরে করে রাখার ক্ষমতা রাখে না। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। কেউ যদি তা অমান্য করে, তাহলে তা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল।”

এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, “ঘটনাটি সম্পর্কে আমি জানি না। তবে এমন কিছু ঘটেছে জানতে পারলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সজিব

×