
ছবি: জনকণ্ঠ
একদিকে পাহাড়ি সংস্কৃতি, অন্যদিকে ঐতিহ্যের পুনরুজ্জীবন। এই দুইয়ের মেলবন্ধনে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়াম পরিণত হয় এক বিশাল ক্রীড়ানন্দের অঙ্গনে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) বিকেলে আয়োজিত বলী খেলা এবার ছাপ ফেলেছে নানা দিক থেকেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বলী, উপচে পড়া দর্শক, ঢোলের তালে রিং কাঁপানো বলীদের লড়াই, আর সবচেয়ে বড় চমক ছিল নারী বলীদের প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক অংশগ্রহণ।
শুধু প্রতিযোগিতা নয়, এই আয়োজন হয়ে উঠেছে এক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের প্রতীক। স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে শুরু হওয়া এই খেলায় অংশ নেন মোট ৮২ জন বলী, যাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়ই ছিলেন। সিনিয়র-জুনিয়র, নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট চারটি গ্রুপে অনুষ্ঠিত হয় খেলা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মর্ম সিংহ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে বলী খেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা, আর প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেন, “বলী খেলা কেবল শরীরচর্চা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। খেলাধুলা আমাদের ঐক্য ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দেয়, তরুণদের জন্য তা অনুপ্রেরণার উৎস।”
জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিরুনা ত্রিপুরা নারী বলীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে বলেন, “এই পদক্ষেপ সমাজে নারীর ক্ষমতায়নের এক প্রতীক। ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা আরও প্রসারিত হবে বলেই আমার বিশ্বাস।”
সিনিয়র বিভাগে কুমিল্লার বাঘা শরীফ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াই শেষে বিজয়ী হন। খেলা শেষে অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, “এই জয় আমার কঠোর পরিশ্রম আর দর্শকদের ভালোবাসার ফল। দর্শকদের এই উচ্ছ্বাস আমাকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়েছে।”
জুনিয়র বিভাগে নয়নের জয়ও ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফসল। নয়ন বলেন, “প্রথমবার এখানে এসে এত ভালোবাসা পাবো ভাবিনি। গ্যালারির গর্জন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।”
সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিলেন নারী বিভাগের চ্যাম্পিয়ন মাসিনু মারমা। নিজের অর্জন নিয়ে তিনি বলেন, “অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে খেলেছি। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছি। নারীরা চাইলে সবই পারে।”
খাগড়াছড়ির মনিতা ত্রিপুরা পুরো পরিবার নিয়ে খেলা দেখতে এসেছিলেন। খেলা শেষে অভিভূত হয়ে বললেন, “মেয়েদের সাহস আর পারফরম্যান্স দেখে গর্বে বুক ভরে গেছে। এমন আয়োজন আগে কখনো দেখিনি।”
এই প্রতিযোগিতা ঘিরে স্টেডিয়ামজুড়ে ছিল উৎসবের আবহ। দর্শকদের জন্য ছিল তাৎক্ষণিক লটারি, পুরস্কার, খাবারের স্টল, আর নানা রকম সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল খাদেমুল ইসলাম, মেজর কাজী মোস্তফা আরেফিন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুমানা আক্তারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। আয়োজনকে সফল করতে সক্রিয় ছিলেন বলী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাবুধন বলী ও তার দল।
এই বলী খেলা আবারও প্রমাণ করলো। এটি কেবল খেলা নয়, এটি একটি সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক আয়োজন, যা পুরোনো ঐতিহ্যকে নতুন মাত্রায় তুলে ধরে সমাজে।
শহীদ