
ছবি: জনকন্ঠ
কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন বটগাছ, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ছুটে আসছেন এই অপরূপ স্থানটি দেখতে।
মঙ্গলবার (১০ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিকেল হতেই তরুণ-তরুণী, নবদম্পতি এবং বিভিন্ন বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। চারপাশে যেন মানুষের ঢল। সৌন্দর্যপিপাসু এসব মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে পথঘাট। কেউ বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসছেন খোশগল্প করতে, কেউবা স্মৃতিময় ছবি তুলছেন মোবাইলে।
স্থানীয়ভাবে ‘মহিষ চরার দোলা’ নামে পরিচিত এই স্থানটি বর্তমানে রীতিমতো পর্যটন কেন্দ্রের রূপ নিয়েছে। ঈদ-উল আযহা ও ছুটির আবহে এলাকার ফুসকা, ঝাল চানাচুর ও ঠান্ডা পানীয়র অস্থায়ী দোকানগুলোতে ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা যায়। দোকানিরা হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতা সামলাতে।
বিশালাকৃতির প্রায় ৪০-৫০ বছরের পুরোনো বটগাছটি ফাঁকা ফসলি মাঠের মাঝে একা দাঁড়িয়ে আছে। আশপাশে নেই কোনো ঘন বসতি, ফলে প্রকৃতির নির্মল বাতাস আর সবুজের ছায়ায় এক অপূর্ব প্রশান্তির আবেশে মগ্ন হতে বাধ্য হন আগতরা।
বটগাছটি রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান বাজার থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে এবং উলিপুর উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত। কাছাকাছি ফরকেরহাট বাজার থেকেও সহজেই পৌঁছানো যায় এখানে।
স্থানীয় যুবক মো. সামিউল ইসলাম জানান, “কয়েক বছর আগে একটি ভয়াবহ বন্যায় আশপাশের সব এলাকা প্লাবিত হলেও, বটগাছটি পানির মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন কেউ একজন মোবাইলে দৃশ্যটি ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করলে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর থেকেই মানুষের আগমন বাড়তে থাকে।”
উলিপুর উপজেলার মো. ছাইদুর রহমান তরুণ বলেন, “মোবাইলে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে মনে মনে চিন্তা করছি ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে গেলে ওই জায়গাটিতে একবার ঘুরে আসব দূর থেকে বন্ধুদের নিয়ে এসেছি। এখানে এসে মুগ্ধ হয়ে গেছি। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়ে রেখেছে জায়গাটিকে। এত সুন্দর পরিবেশে আসলে আর ফিরতে মন চায় না।”
রাজারহাট উপজেলার নাজিমখান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মো. মমতাজ উদ্দিন বলেন, “প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য মানুষ একটু অবসর পেলেই কোথাও ঘুরতে যেতে চায়। কিন্তু রাজারহাটে উল্লেখযোগ্য বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় এই বটগাছ এলাকার মতো স্থানগুলোই এখন মানুষের বিনোদনের প্রিয় ঠিকানা হয়ে উঠেছে।”
স্থানীয়দের দাবি, এলাকাটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এটি আরও পরিপূর্ণ রূপ পাবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বসার জায়গা ও স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এখানে আগত দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত হবে বলে মনে করেন তাঁরা।
প্রকৃতিপ্রেমী মানুষদের পদচারণায় মুখরিত এই বটগাছ এলাকা যেন এখন এক অপার সৌন্দর্যের মঞ্চ। যেখানে প্রকৃতি কথা বলে, হৃদয় জুড়ায়।
Mily