ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইমামকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০৯:৪৬, ৯ জুন ২০২৫

ইমামকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের হস্তিশুন্ড জাবালে নূর জামে মসজিদ এক ঐতিহাসিক সাক্ষী হলো এক অভূতপূর্ব রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে। ওই মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. আব্দুল হাই একটানা ৩৮ বছর ধর্মীয় দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গিয়েছেন। এজন্য মসজিদের মুসুল্লীদের উদ্যোগে রবিবার (৮ জুন) বিকেলে ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. আব্দুল হাইকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন।

১৯৮৭ সালে গৌরনদী উপজেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ওই মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন মাওলানা মো. আব্দুল হাই। পরে তিনি তার মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে হয়ে ওঠেন ওই এলাকার ধর্মীয় নৈতিক শিক্ষার পথপ্রদর্শক। হস্তিশুন্ড জাবালে নূর জামে মসজিদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং প্রজ্ঞার সাথে চালিয়ে যান ইমামতি। তার জুমার খুতবা, শিক্ষণীয় বয়ান ও মানুষকে আপন করে নেওয়ার হৃদয়স্পর্শী ব্যবহারে মুগ্ধ এলাকার মুসুল্লী থেকে শুরু করে সব ধর্মের লোকজন।

এই আলোকবর্তিকাকে বিদায় জানাতে আয়োজন করা হয় এক ব্যতিক্রমী সংবর্ধনার। ফুলেল শুভেচ্ছা, দোয়া-মোনাজাত এবং চোখ ভেজানো আবেগঘণ পরিবেশে বিদায়ের মুহুর্ত হয়ে ওঠে স্মরণীয়। ইমামের বিদায় অনুষ্ঠানকে ঘিরে বের করা হয় মোটরসাইকেল ও গাড়ির শোভাযাত্রা। শত শত মানুষ ভিড় করেন প্রিয় ইমামকে শেষবারের মতো দেখতে, কৃতজ্ঞতা জানাতে ও দোয়া নিতে। তার বিদায়ের সময় সবার মুখে একই কণ্ঠ ধ্বনিত হয়-“হুজুর, আপনি আমাদের আলোর দিশারী ছিলেন।”

স্থানীয় মুসুল্লীরা সম্মিলিতভাবে তাকে উপহার স্বরূপ দিয়েছেন নগদ এক লাখ টাকা। ওই এলাকার সকল ধর্মের মানুষের হৃদয়ে গেঁথে থাকা এই ইমামের বিদায়ী সংবর্ধনার অনুষ্ঠান যেন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা ছিল না। ছিল এক ইতিহাসের শেষ অধ্যায়।

এমন রাজকীয় বিদায় সাধারণত একজন ইমামের জন্য দেখা যায় না। কিন্তু মাওলানা আব্দুল হাই ছিলেন ব্যতিক্রমী মানুষ। যার প্রতিটি কাজ ছিল মানুষের হৃদয় জয় করার মতো। তার শিক্ষা, জীবনদর্শন ও অনন্য মানবিকতা প্রজন্মের পর প্রজন্মে আলো ছড়াবে এই জনপদে। এমনটাই প্রত্যাশা করছেন এলাকাবাসী।

আঁখি

×