ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খানজাহান আলী (রহ.) মসজিদ, সাড়ে ৫ শতকের প্রাচীন এই স্থাপত্য-কারুকার্যে অনন্য

মতিন গাজী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, যশোর

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ২০:৪০, ৩১ মে ২০২৫

খানজাহান আলী (রহ.) মসজিদ, সাড়ে ৫ শতকের প্রাচীন এই স্থাপত্য-কারুকার্যে অনন্য

যশোরের অভয়নগরে কালের সাক্ষী হয়ে নীরবে নিভৃত্তে ঐতিহাসিক স্মৃতি বুকে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) তৈরি একটি জামে মসজিদ। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলীর দিক থেকে স্থাপত্য শিল্পের অনন্য নিদর্শন এটি। মসজিদটির অবস্থান উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামে, ভৈরব নদের তীরে। সাড়ে ৫০০ বছর আগে ইসলাম ধর্ম প্রচারক ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার তৎকালীন স্থানীয় শাসক হযরত খাজা খানজাহান আলী (রহ.) এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন।

সোমবার সকালে উপজেলার শুভরাড়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে সড়ক ও নদীপথে শুভরাড়া গ্রামে যাওয়া যায়। গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে ভৈরব নদের তীরে এক গম্বুজ ও চার মিনারবিশিষ্ট এই মসজিদটি অবস্থিত।ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫শ শতকের শেষদিকে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) তার অনুসারী ও সৈন্যবাহিনী নিয়ে যশোরের বারোবাজার এলাকা থেকে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে যান। চলতি পথে তিনি অসংখ্য রাস্তা, দীঘি নির্মাণ ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদ নির্মাণ শেষে খানজাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে চলে গেলেও ধর্ম প্রচারের জন্য একজন খাদেম রেখে যান। খাদেমের মৃত্যুর পর মসজিদের পশ্চিমে ভৈরব নদের তীরে তাকে সমাহিত করা হয়, যা স্থানীয়দের কাছে ‘জ্বিনের কবর’ নামে পরিচিত।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বর্গাকার মসজিদটির অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৫.১৩ বর্গমিটার। চার কোণায় চারটি অষ্টমকোণাকৃতি টারেট রয়েছে। মসজিদের ভেতরের আয়তন ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি গুণ ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি, উচ্চতা ২৫ ফুট। বাইরের পরিমাপের এক মিনারের মধ্যবিন্দু থেকে অন্য মিনারের দূরত্ব ২৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে ৩টি দরজা রয়েছে। পূর্বের সদর দরজার খিলান ১১ ফুট ও প্রস্থ ৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত মসজিদে ছোট-বড় সব ধরনের ইট ব্যবহৃত হয়েছে।প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের ‘যশোর ও খুলনার ইতিহাস’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ‘খলিফাতাবাদ’ অধ্যায়ে খানজাহান আলী (রহ.) কর্তৃক নির্মিত এই মসজিদের উল্লেখ আছে। লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, হযরত খানজাহান আলী (রহ.) বারোবাজার থেকে ভৈরব নদের কূল ধরে অভয়নগরের শুভরাড়া গ্রামে পৌঁছান। খ্রিষ্টীয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোনো এক সময় তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাশুয়াড়ী গ্রামে মাত্র এক রাতে সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে একটি দীঘি খনন করেন।

খানজাহান আলী মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা সাইফুল্লাহ বলেন, ১৯৬৩ সালের আগে এটি একটি পরিত্যক্ত গম্বুজভাঙ্গা ধ্বংসস্তুপ ছিল। পরে এলাকাবাসী এটি সংস্কার করে নামাজ আদায় শুরু করেন। পরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নজরে এলে মসজিদটির সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। মূল কাঠামো রেখে মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্রতিদিন শতাধিক মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন। পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ দূরদূরান্ত থেকে মসজিদের সৌন্দর্য ও ‘জ্বিনের কবর’ দেখতে আসেন।

রাজু

×