
প্রাচীন জেলা শহর পাবনা, আছে নানা স্থাপনা ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে স্বতন্ত্র জেলার স্বাকৃতি লাভ করে। পাবনা নাম করণের উল্লেখযোগ্য কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে প্রত্নতাত্মিক কানিংহাম অনুমান করেন যে, প্রাচীন রাজ্য পুন্ড্র বা পুন্ড্রবর্ধনের নাম থেকে পাবনা নামের উদ্ভব হয়ে থাকতে পারে। তবে সাধারণ বিশ্বাস পাবনী নামের একটি নদীর মিলিত স্রোত ধারার নামানুসারে এলাকার নাম হয় পাবনা।
পাবনার দর্শনীয়স্থানসমূহ
পাবনা মানসিক হাসপাতাল
পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে হেমায়েতপুরে অবস্থিত পাবনা মানসিক হাসপাতাল। দেশের একমাত্র মানসিক হাসপাতাল হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রোগীদের যেমন চিকিৎসা করা হয় তেমনি ঘুরে দেখতে আসেন অনেক পর্যটক।
পাবনা তাড়াশ ভবন
পাবনা জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত তাড়াশ ভবন। তৎকালীন জমিদার রায়বাহাদুর বনমালী রায় ১৮ শতকের কোন একসময় নির্মাণ করেন। ১৯৯৮ সালের ৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। রায় বাহাদুর জমিদারের বংশধর ২য় বিশ্ব যুদ্ধের সময় আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়। ভবনটি পাবনা গোপালপুর মৌজায় অবস্থিত।
মহানায়িকা সূচিত্রাসেনর স্মৃতি সংগ্রহশালা
সূচিত্রাসেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনা শহরের জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার শিশুকাল কেটেছে পাবনায়। তিনি কবি রজনীকান্ত সেনের নাতি। পাবনাবাসী তার স্মৃতি সংগ্রহশালা নির্মাণ করেছেন।
বাস টার্মিনাল থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে শহরের জেলা শিল্পকলা একাডেমি ও পাবনা সরকারি কলেজের সম্মুখে তার স্মৃতিশালা।
জোড় বাংলা মন্দির
পাবনা বাস টার্মিনাল থেকে ২.৫ কিলোমিটার দূরে শহরের দক্ষিণ রাঘবপুর জোড় বাংলা মন্দির অবস্থিত। ইট দিয়ে তৈরী দোচালা ঘরের ছাদকে একত্রে করা হয়েছে।
এডরুক লিমিটেড, পাবনা
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হামিদ খানের পরিচালনায় এই ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের যাত্রাশুরু করে। স্থপনা কারুকার্য অত্যান্ত সুন্দর। এডরুক লিমিটেড পাবনা অনন্তবাজারের পাশে অবস্থিত। পাবনা বাস টার্মিনাল থেকে ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ভাড়ারা শাহী মাসজিদ
পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ার ইউনিয়নে আনুমানিক ১৭৫৫ সালে নির্মিত হয় ভাঁড়ারা শাহী মসজিদ। জানা যায়, বাদশা শাহ আলমের শাসন আমলে স্থাপিত হয় মসজিদটি। পাবনায় হাজার হাজার মানুষ মানত করে মসজিদে। বর্তমান মসজিদটি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ(আশ্রম-মন্দির)
পাবনা বাস টার্মিনাল থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে হেমায়েতপুরে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দের সৎসঙ্গ অবস্থিত। তার পিতার নাম শ্রী শিবচন্দ্র ও মাতার নাম শ্রী যুক্তা মনমোহিনী। এই মন্দিরটি আর্কষনীয় কারুকার্যে নির্মিত হয়েছে।
গাজনার বিল
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলায় গাজনার বিল অবস্থিত। জেলা শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে খয়রান ব্রিজের উপর থেকে গাজনার বিলের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য্যে উপভোগ করা যায়। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ উপভোগের জন্য নিরিবিলি জায়গা।
আজিম চৌধুরির জমিদার বাড়ি
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার দুলাই ইউনিয়নে আজিম চৌধুরীর জমিদার বাড়ি, যা দুলাই ইউনিয়নে অবস্থিত। ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আজিম চৌধুরী ১২০ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন দ্বিতল ভবনের এই জমিদার বাড়ি। চারিদিকে নিরাপত্তার জন্য খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘী। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলেও জমিদারদের চিহ্ন রয়ে গেছে এখানে।
জেলা শহর থেকে পাবনা-ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে ২০ কিলোমিটার দূরে দুলাই আজিম চৌধুরীর বাড়ি।
চাটমোহর শাহী মসজিদ
প্রায় ৪৫০ বছরের পূর্বের সুলতানী-মোঘল আমলের স্থাপনা তিন গম্বুজ মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে পাবনা চাটমোহর উপজেলায়। পাবনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার দূরে মসজিদ টি রয়েছে।
ইশ্বরদী রেলস্টেশন
প্রায় ১০০ বছরের পুরনো ইশ্বরদী রেলস্টেশন। পাবনা জেলার সাথে ট্রেনে যোগাযোগের দীর্ঘ পুরাতন রেলস্টেশনের মধ্যে একটি। ঢাকা থেকে খুব সহজে ট্রেনে ইশ্বরদী আসা যায়। পাবনা জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫-৪০ কিলোমিটার দূরে ইশ্বরদী উপজেলায় রেলস্টেশনটি অবস্থিত।
পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু
পাবনা জেলার ইশ্বরদী উপজেলায় পাকশী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ সেতু। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পাবনার ইশ্বরদী উপজেলার পাকশী ও কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারাকে সংযুক্ত করেছে। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১.৮ কিলোমিটার। তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জের নাম অনুসারে এই সেতুর নামকরণ করা হয়। ১৯০৯ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
কুষ্টিয়ার বিখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ'র নামে সেতুটির নামকরণ করা হয়। এই সেতুটি পাবনা জেলা ও কুষ্টিয়া জেলাকে একত্রে করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে দুই জেলার মধ্যে। লালন শাহ সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ একই নদীর উপর প্রায় একসাথে হওয়ার সুবাদে পর্যটকদের ভীড় বেশি সেখানে। নদীর শীতল হাওয়া, নৌকা ভ্রমণ আর দুইটা ব্রিজ অপরূপ সৌন্দর্য্যের লিলা।
উল্লেখিত সকল স্থানে পাবনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে সড়ক পথে খুব সহজে নিজস্ব যানবাহন বা অটো ভ্যান ও বাসে যাওয়া যায়।
আঁখি