
সবুজ পাতার ফাঁকে থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, বাদামি, কালো আর সবুজ রঙের আঙুর ফল। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও তেমন রসালো আর সুস্বাদু। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, একেকটি আঙুর ফলের স্বাদ আর ঘ্রাণে রয়েছে ভিন্নতা। এমনই নানা জাতের আঙুর পরীক্ষামূলক চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শরীয়তপুরের সাইফুল ইসলাম শোভন। তার সংগ্রহে রয়েছে দেশি-বিদেশি মোট ৩০ প্রজাতির আঙুর। চলতি মৌসুমে ৮ প্রজাতির গাছে এসেছে সফল ফলন। আঙুর চাষে এমন সাফল্য দেখে ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন এই যুবক।
শরীয়তপুর পৌরসভার আদর্শ আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম শোভন (৩৩)। ছোটবেলা থেকেই চাষাবাদে তার গভীর আগ্রহ। বাড়ির আঙিনা আর পুকুরপাড়ের খালি জমিতে তিনি নানা ধরনের ফল, ফুল ও সবজির চাষ করতেন। করোনাকালে অফিস বন্ধ থাকায় সময় কাটাতে ইউটিউবে দেখা শুরু করেন বিভিন্ন কৃষি-সম্পর্কিত ভিডিও। তখনই নজরে আসে আঙুর চাষের ভিডিও এবং সেখান থেকেই জন্ম নেয় স্বপ্ন।
তার বিশ্বাস ছিল, শরীয়তপুরের মাটিতেও আঙুর চাষ সম্ভব। এরপর কুড়িগ্রাম, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধীরে ধীরে চারা সংগ্রহ শুরু করেন। তিন বছর ধরে হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে সংগ্রহ করেন ৩০টি ভিন্ন জাতের আঙুর চারা। অবশেষে সেই চারা রোপণ করে গড়ে তোলেন নিজের আঙুর বাগান।
চলতি বছর তার বাগানে বাইকুনুল, একোলো, ডিক্সন, ভ্যালোক, লোরাস, ভ্যালেস, সবুজ মিষ্টি (ম্যাংগো ফ্লেভার) ও রেডগ্লোভ এই ৮ প্রজাতির আঙুর গাছে ফলন এসেছে। প্রতিটি জাতের আঙুরই অত্যন্ত রসালো, মিষ্টি ও স্বাদে বৈচিত্র্যময়।
শুধু আঙুরই নয়, শোভনের ছোট্ট বাগানে রয়েছে আরও নানা জাতের ফল ও ফুল। ফলের মধ্যে রয়েছে ফিলিপিনি আখ, সাদা জাম, ঘামলেস বেল, কমলা লেবু ও বিভিন্ন জাতের আম। আর ফুলের মাঝে রয়েছে ১৫ জাতের বাগানবিলাস, কাঠগোলাপ, রেইনলিলিসহ দেশি-বিদেশি নানা জাতের ফুলগাছ।
শোভন বলেন, “যখন জানতে পারলাম দেশে ৩০ প্রজাতির ওপর আঙুর চারা রয়েছে, তখনই সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিই। আমি হাতখরচের টাকা বাঁচিয়ে এই চারাগুলো সংগ্রহ করেছি। সবাই ভেবেছিল আমাদের এই অঞ্চলে আঙুর টক হবে। কিন্তু আমি সেটা ভুল প্রমাণ করতে পেরেছি। আমার বাগানে যে ৮ প্রজাতির গাছে ফল এসেছে, সবগুলোই মিষ্টি ও সুস্বাদু। প্রতিটির স্বাদ ও ঘ্রাণ আলাদা।”
তিনি আরও বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে আঙুর চাষ করছি। এবার সফলভাবে ফলন এসেছে। আমার ইচ্ছে আছে অদূর ভবিষ্যতে কৃষি অফিসের সহায়তা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষ শুরু করবো। আমি চাই, আমার সংগ্রহে থাকা ৩০ জাতের আঙুর আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ুক। আমি চাই, প্রত্যেক বাড়ির আঙিনায় অন্তত একটি আঙুর গাছ থাকুক। আর যারা বেকার তরুণ আছেন, তারা যেন আঙুর চাষ করে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন।”
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন ইসলাম বলেন, “আমাদের এলাকার শোভন ভাই ইউটিউব দেখে আঙুর চাষ শুরু করেছেন। তার বাগানে প্রায় ৩০ জাতের আঙুর গাছ রয়েছে। এ বছর ৮ জাতের গাছে ফল ধরেছে। আঙুরগুলো খেতে খুবই সুস্বাদু। আগে আমরা ভাবতাম দেশে উৎপাদিত সব আঙুরই টক হয়। কিন্তু তিনি সেই ভুল ধারণা ভেঙে দিয়েছেন।”
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা খবর পেয়েছি, শোভন নামের এক যুবক ৩০ প্রজাতির আঙুরের চাষ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন ফলগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু। আমরা শিগগিরই তার খামার পরিদর্শন করবো। ফলন ভালো হলে কৃষকদের আঙুর চাষে উৎসাহিত করবো এবং প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহায়তাও নিশ্চিত করবো।”
রাজু