
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়টির নাম শুনলেই আমাদের ক্যারিয়ার ভাবনায় প্রথমে আসে সাংবাদিক বা সাংবাদিকতা। আমাদের অনেকেরই ধারণা সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়লেই ক্যারিয়ার হিসেবে শুধুই সাংবাদিকতা বেছে নিতে হয়। প্রকৃত বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এই যুগে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার হিসেবে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের যুগ উপযোগী ও পছন্দসই চাকরির ক্ষেত্র। এমন একটি আকর্ষণীয় ও জনপ্রিয় ক্যারিয়ার বা চাকরির ক্ষেত্র হলো জনসংযোগ (Public Relation) যেটি আমাদের কাছে পিআর (PR) হিসেবে অধিক পরিচিত। বাংলাদেশে ১৯ শতকের শেষের দিকে পিআর এর যাত্রা শুরু হয়। ক্যারিয়ার হিসেবে এটি নতুন হলেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে।
পিআর বা জনসংযোগ হলো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সাথে মানুষ ও গণমাধ্যমের কার্যকরী সংযোগ ও যোগাযোগ আর যিনি এই কাজ করেন তাকে পিআর অফিসার (Public Relation Officer) বা জনসংযোগ কর্মকর্তা বলা হয়। কোন প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকরী যোগাযোগ ও সফল প্রচারণার উপর। সকল প্রতিষ্ঠানই চায় সবার সেরা হতে। এজন্য বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থায় জনসংযোগ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তাই দিন দিন পিআর এর ক্যারিয়ার ক্ষেত্র প্রসারিত হচ্ছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীরা পিআর পেশায় সর্বাধিক অগ্রাধিকার পায়। তবে এমন নয় যে অন্য বিভাগ থেকে পড়ে আসা শিক্ষার্থীরা পিআর অফিসার হতে পারবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে পিআর অফিসার হতে হলে প্রার্থীকে মিডিয়া নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হয় এবং যোগাযোগ দক্ষতায় ভালো হতে হয়।
একজন পিআর অফিসার যোগাযোগে দক্ষ, কৌশলী ও সৃজনশীল হয়ে থাকেন। তাকে অনলাইন ও অফলাইন ব্যবস্থায় যোগাযোগে দক্ষ হতে হয়। এই যোগাযোগ দক্ষতাই তার প্রধান হাতিয়ার। পিয়ার অফিসারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো-
১. প্রেস রিলিজ লেখা।
২. নিজের প্রতিষ্ঠানের সফল ও ইতিবাচক প্রচারণা চালানো।
৩. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও আয়োজন করা।
৪. গণমাধ্যমে বর্তমানে কি হচ্ছে ও নিজের প্রতিষ্ঠানের খবর কীভাবে প্রচারিত হচ্ছে তা নিয়মিত খোঁজ রাখা।
৫. প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের সংবাদ গণমাধ্যমে পাঠানো।
৬. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের জনপ্রিয়তা বাড়ানো।
৭. ক্রাইসিস কমিউনিকেশন, ইত্যাদি।
পিআর ক্যারিয়ার হিসেবে চ্যালেঞ্জিং হলেও যারা সৃজনশীলতা পছন্দ করে এবং যোগাযোগকে উপভোগ করে তাদের জন্য পেশা হিসেবে এটি উপযুক্ত। যারা আগে থেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থাকে তারা এই ক্যারিয়ারে আসলে সাফল্যের সাথে কাজ করে যেতে পারে। এখানে মূলত যোগাযোগ দক্ষতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তাই পিয়ার অফিসার হতে চাইলে অনলাইন ও অফলাইনে যোগাযোগ দক্ষতা বাড়াতে হবে। আগে থেকে মিডিয়া বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত থেকে এ দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়া যায়।
সাংবাদিকতায় পড়া শিক্ষার্থীরা পিআর পেশায় অগ্রাধিকার পায় বলে তাদের জন্য সফল ক্যারিয়ার গঠনে এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন মিডিয়া কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থেকে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলে সহজে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে পিআর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা যায়। তাই গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য পিআর হতে পারে একটি সফল ও সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার।
আঁখি