ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন নবীনগরের চাষীরা

কাউছার আলম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, নবীনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ২০:১২, ৩১ মে ২০২৫

পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন নবীনগরের চাষীরা

একটা সময় পান চাষের ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার পান চাষিরা। পর্যায়ক্রমে এ এলাকার চাষিরা পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং তারা সফলতার মুখও দেখেন। সময়ের সাথে সাথে এ উপজেলায় কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সরকারি প্রণোদনার অভাবে দিন দিন কমে যাচ্ছে পান আবাদের পরিমাণ। 

জানা যায়, একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি অপরদিকে চাষিদেরকে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সুস্বাদু পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের বহু পরিবার আদিকাল ধরে পান চাষে জড়িত ছিলো। এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয় ছিল। এর চাহিদাও প্রচুর। সরকারি প্রণোদনা বা সঠিক পরিকল্পনায় এ অঞ্চলে পানের পরিকল্পিত চাষাবাদ ঘুরিয়ে দিতে পারে স্থানীয় পান চাষিদের ভাগ্যের চাকা, এমনকি জাতীয় অর্থনীতিতেও রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একটা সময় শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীঘর, শাহবাজপুর এবং শ্যামগ্রামে পানের প্রায় ৪০-৪৫ টি পানের বরজ থাকলেও এখন তা কমে বর্তমানে এ এলাকায় মাত্র ৭-৮ টি পানের বরজের দেখা মিলেছে। পূর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো যারা পানের বরজ নিয়ে আছেন তারাও দিন দিন এ পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, একটা সময় দেখতাম আমাদের এলাকায় পান চাষ করতে চাষিরা বেশ আগ্রহ দেখাতো। ঐসময় দেখতাম প্রায় ৪০ থেকে ৫০ বিঘা জমিতে পানের আবাদ হতো। তবে বর্তমানে এর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পুরো এলাকার জুড়ে ৭ থেকে ৮ বিঘা জমিতে গুটি কয়েকজন চাষি পানের চাষ করেন। তিনি আরো বলেন, সরকার পান চাষিদের সহায়তা করলে হয়তো পান চাষে চাষিরা আবারো আগ্রহী হতে পারেন।

স্থানীয় পান চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানের বরজে বিঘা প্রতি প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। সুন্দরভাবে পরিচর্যা করলে নতুন বরজ থেকে ৬ মাস থেকে পান তোলা যায়। পানের ভাল ফলন ও বাজারে ভাল মূল্য পাওয়া গেলে বছরে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি আসে। তারা আরো বলেন, পানের বরজ তৈরি করে পানের লতা লাগিয়ে ভাল ফলন পাওয়া পেলেও সার, কীটনাশক ব্যবহারে পানের রোগ ঠেকাতে পারছেন না তারা। রোগবালাই কিংবা সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা ঔষধ বিক্রেতাদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়, এব্যাপারে চাষিরা উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কোন পরামর্শ বা সহযোগিতা পায়না। ফলে অনেক সময় তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই পানের বরজ বাদ দিয়ে তারা অন্য ফসল ফলানোর দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।

এখানকার একজন স্থানীয় পান চাষি মনোরঞ্জন দত্ত জানান, সরকার কৃষকদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করলেও পানচাষির কপালে সার-বীজ ও এক বোতল কীটনাশকও জোটে না। কৃষি বিভাগ থেকে যদি পান চাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করতেন তাহলে চাষিরা আগ্রহ হারাতেন না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যেকোনো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার তাদের সহায়তা করে কিন্তু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষির পাশে কেউ দাঁড়ায় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আর কেউ এ এলাকায় পান চাষে আগ্রহ দেখাবে না। 

এ ব্যাপারে নবীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, উপকূলীয় এলাকা ছাড়া পান চাষের উপর কৃষি বিভাগের কোনো কার্যক্রম নেই। তবে এখানকার পান চাষিরা যে কোন প্রয়োজনে পরামর্শ চাইলে তাদের আমরা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করবো।

উল্লেখ্য, রসনা বিলাসের অন্যতম একটি উপকরণ হচ্ছে পান। পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসলও বটে। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়ে-শাদিতে পান-সুপারির কদর সেই আধিকাল থেকেই চলে আসছে। পান দিয়ে চলে মেহমানদারীতে আপ্যায়নও। যুগের সাথে অনেক কিছুর চাহিদা কমে গেলেও রসনা বিলাসের অন্যতম এই উপকরণটির চাহিদা বিন্দুমাত্র কমেনি এখনো। 

আঁখি

×