ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জুলাইয়ে চূড়ান্ত হতে পারে জাতীয় সনদ

রংপুরে ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপ

তাহমিন হক ববী, স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর

প্রকাশিত: ২০:০৯, ৩১ মে ২০২৫

রংপুরে ‘জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল সংলাপ

ছয়টি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশসমূহ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে 'জাতীয় ঐকমত্য কমিশন'র প্রথম ধাপের আলোচনা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়নের দাবি সামনে এসেছে।

এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নাগরিক প্রত্যাশা যাচাইয়ের লক্ষ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর পক্ষ থেকে 'জাতীয় সনদ ও নাগরিক প্রত্যাশা' শীর্ষক একটি গোলটেবিল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের আট জেলার বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের নিয়ে।

শনিবার (৩১ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর পর্যন্ত এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয় রংপুর আরডিআরএসের তিস্তা ভবনের হলরুমে।

নাগরিক সংলাপে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় ঐকমত্য বিষয়ক বিশেষ সহকারী মনির হায়দার অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সুজনের রংপুর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় এবং রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সংবিধান সংশোধনের ব্যাপারে জনগণের মতামত ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। কারণ সংবিধান হলো এক ধরনের সামাজিক চুক্তি, যার ভিত্তিতে রাষ্ট্র নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং নাগরিকরা রাষ্ট্রের কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলবে। এই কারণেই রংপুর বিভাগের বিভিন্ন পেশার নাগরিকদের সঙ্গে এই আয়োজন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশন কতগুলো মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে ঐকমত্য হয়েছে, কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরও আলোচনা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, জুলাইয়ের মধ্যে একটি নাগরিক সনদ প্রণয়ন করতে পারবো। এই সনদের মূল উদ্দেশ্য হবে—নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ, ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করা। আমরা এমন একটি সনদ প্রণয়নের চেষ্টা করছি যা হবে নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একটি চুক্তি, যাতে নাগরিকরা দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো—সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ। এজন্য নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের কার্যকর ও সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য এবং অধ্যাদেশের মাধ্যমে কিছু আইন পাস করা জরুরি। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোতেও সংস্কার আনা প্রয়োজন।”

তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ (Upper House) প্রতিষ্ঠা একই ব্যক্তি যেন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন না হতে পারেন—এবং নারীর প্রকৃত রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ১০০ আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে সরাসরি নারীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, “একটা দীর্ঘ সময় বাংলাদেশে পরিবেশ স্বাভাবিক ছিল না। সব ধরনের পরিবেশই বিষাক্ত হয়ে গিয়েছিল। মানুষকে বিভাজিত করা হয়েছিল। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ বলে এমন একটি বিভাজনমূলক আবহ সৃষ্টি হয়েছিল, যেখানে মানুষ ভুলে গিয়েছিল আসলে মুক্তিযুদ্ধ কী ছিল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারের অর্ধেকও যদি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বাংলাদেশে একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।”

সংলাপে রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধা থেকে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন পেশার নাগরিকরা তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।
 

সজিব

×