ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০২ জুন ২০২৫, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়: কাদের গনি চৌধুরী

প্রকাশিত: ২০:০২, ৩১ মে ২০২৫

অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়: কাদের গনি চৌধুরী

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, সংস্কৃতিই একটি জাতির পরিচয়। সংস্কৃতিই একটি জাতিসত্তার অস্তিত্বের কারণ।

আজ সন্ধ্যায় টেলিভিশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ট্র‍্যাব) আয়োজিত "ট্র‍্যাব মিডিয়া আইকনিক অ্যাওয়ার্ড - ২০২৫" অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ট্র‍্যাব সভাপতি কাদের মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি, ড. জাহাঙ্গীর আলম রুস্তম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ, সানাউল হক বাবুল, এরফানুল হক নাহিদ, আবুল কালাম আজাদ, সুহৃদ জাহাঙ্গীর, দুলাল খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তানিয়া আফরিন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, কোনো সভ্য সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি হচ্ছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতি মানুষের শুভ বোধ ও শুচিন্তনের বিকাশের জন্য; যেনতেনভাবে আনন্দ-বিনোদনের জন্য নয়। অসংযত আমোদ-ফুর্তিকে সংস্কৃতি বলা যায় না। তাকে বলা হয় অপসংস্কৃতি। ভোগবাদী উশৃঙ্খল জীবনের যে আনন্দ, তা সংস্কৃতি নয়।

তিনি বলেন, জীবন ও সংস্কৃতি একে অপরের পরিপূরক। সংস্কৃতি ছাড়া জীবন অসম্পূর্ণ। কোনো ব্যক্তি, সমাজ কিংবা জনগোষ্ঠীই তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে অস্বীকার করতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতি যেখানে মানুষকে সুন্দরের পথ দেখায়, সেখানে অপসংস্কৃতি মানুষকে অসুন্দর করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয়, তা ক্ষণিকের জন্য উত্তেজক। কোনো জাতি বা দেশের মধ্যে একবার অপসংস্কৃতি ঢুকে গেলে তা অপসারণ করা খুবই কঠিন। অপসংস্কৃতি বিবেকের দরজায় তালা লাগায়। মানুষকে তার মা, মাটি ও দেশ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সংস্কৃতির কাজ জীবনকে বিকশিত করা, চিত্তকে আনন্দিত করা, মানুষকে প্রেমবান করা। আর অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনকে কলুষিত করে, চেতনাকে নষ্ট করে, জীবনকে ধ্বংস করে। তা স্থায়ীভাবে মনোমুগ্ধকর, আকর্ষণীয় ও হৃদয়গ্রাহী হলেও এর কোনো ইতিবাচক ফল নেই।

অপসংস্কৃতি মূলত মানুষকে খারাপ কাজের দিকে টেনে নেয়। ম্যাথিউ আরনল্ডের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে খাঁটি হওয়া বা মার্জিত হওয়া বা রুচিশীল হওয়া।’ মোতাহের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘সংস্কৃতি মানে বাঁচা, সুন্দরভাবে বাঁচা।’ আর ড. আহমদ শরীফ লিখেছেন, ‘পরিশীলিত ও পরিশ্রুত জীবনচেতনাই সংস্কৃতি।’ কাদের গনি চৌধুরী বলেন, আমিও এই ধারণাই পোষণ করি।

তিনি বলেন, আমাদের অনেকের ধারণা—বিদেশি সংস্কৃতি মানেই অপসংস্কৃতি। এটা ঠিক নয়। যে সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে বিপথে পরিচালিত করে, সেটাই অপসংস্কৃতি—তা দেশি হোক বা বিদেশি। যখন কোনো সংস্কৃতি ভালো কার্যকলাপে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এবং নৈতিকতা বিবর্জিত হয়, তখনই তা অপসংস্কৃতি বলে চিহ্নিত হয়।

এই অপসংস্কৃতির প্রভাবে জাতি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে এবং তরুণ সমাজ বিপথগামী হয়। চাল-চলন, পোশাক-পরিচ্ছদ ও জীবনযাপনের রীতিনীতি অপসংস্কৃতির কারণে অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে। কুরুচিপূর্ণ রচনা সাহিত্য অঙ্গনকে গ্রাস করছে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, অপসংস্কৃতি আজ সংস্কৃতির আসন দখল করে নিয়েছে। অনেক তরুণকে মেয়েদের মতো হাতে বাল বা পিতলের কড়া ও এক কানে দুল পরতে দেখা যায়। আবার মেয়েদের অনেককে দেখা যায় ছেলেদের মতো শার্ট, টাইট জিন্স ও বয়-কাট চুলে। ছেলেরা ফ্যাশনের নামে ছেঁড়া প্যান্ট পড়ে। এগুলো আনন্দের উপকরণ হলেও মূলত অপসংস্কৃতির প্রকাশ। আমাদের তরুণ সমাজ আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, এখন বিত্তবান ও ক্ষমতাবানরা চিত্তবিনোদনের পথ পাল্টে ফেলেছেন। রুচির অবনতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, যার ফলে আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে অনুসরণযোগ্য কিছুই দিতে পারছি না।

বিএফইউজে মহাসচিব আরও বলেন, আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করি, তা যদি দেশপ্রেম শেখায় না, জীবনকে প্রেমময় করে না, মানুষের প্রতি দরদ তৈরি না করে—তাহলে তা হলো অপশিক্ষা। আর অপশিক্ষার পথ ধরেই সমাজে শিকড় গাঁড়ে অপসংস্কৃতি।

তিনি বলেন, আমাদের সমাজের অভ্যন্তরে অপসংস্কৃতি হিংস্র থাবা বিস্তার করছে, তা সহজেই অনুমেয়। বর্তমানে আমরা আমাদের রীতিনীতি, দেশের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। অথচ আজ তা বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে একটি দেশের নিজস্ব ইতিহাস, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের ধরন পাল্টে দেওয়া হয় এবং অস্পষ্ট করা হয় আত্মপরিচয়।

মারিয়া

×