
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আজ শনিবার (৩১ মে) সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত দেশের ১৩৭টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী কলেজে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয় অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে।
পরীক্ষার পুরো আয়োজনে কলেজ কর্তৃপক্ষের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশ, কক্ষ বণ্টন, প্রশ্নপত্র বিতরণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা—সবকিছুই ছিল সুপরিকল্পিত ও নিয়মতান্ত্রিক।
পরীক্ষা শেষে শিক্ষার্থীদের হাসিমুখে বের হতে দেখা যায়। অনেকেই জানিয়েছেন, এমন পরিচ্ছন্ন এবং সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা এর আগে হয়নি। প্রত্যাশা করছেন, ফলাফল হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা পরীক্ষার্থী মাহমুদা পারভীন বলেন, “স্টেশন থেকে কলেজ পর্যন্ত বাইক সার্ভিস ছিল খুব সহায়ক। ছাত্রসংগঠনের ভাইয়েরা পথ দেখিয়ে সহযোগিতা করেছেন।”
বগুড়া থেকে আসা তানভীর হাসান জানান, “কলেজে প্রবেশের পর ফ্রি কলম, পানি এবং দিকনির্দেশনা পাওয়া গেছে, যা মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করেছে।”
পাবনার শিক্ষার্থী সাবরিনা হক বলেন, “ইসলামী ছাত্রী সংস্থা ও অন্যান্য সংগঠনের স্টলে গিয়ে খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি। মনে হয়েছে পরিবারের কেউ পাশে আছে।”
আরেক পরীক্ষার্থী জোবায়ের আহমেদ বলেন, “পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে, প্রশ্নপত্র সহজ ছিল। আশা করছি, রাজশাহী কলেজেই ভর্তি হতে পারব।”
পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তায় রাজশাহী কলেজ শাখার ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনসহ একাধিক ছাত্রসংগঠন বিভিন্ন সেবামূলক স্টল স্থাপন করে। এসব স্টলে ছিল ফ্রি পানি, কলম, আসন খোঁজার সহায়তা, বাইক সার্ভিস ও তথ্যকেন্দ্র। অভিভাবকদের জন্যও বসার ব্যবস্থা রাখা হয়।
নাটোর থেকে আসা অভিভাবক মো. আজিজুল হক বলেন, “এত সুন্দরভাবে সংগঠিত ভর্তি পরীক্ষা ও সহযোগিতা দেখে আমরা অভিভাবকরাও স্বস্তিতে সময় কাটাতে পেরেছি।”
সিরাজগঞ্জের শাহনাজ বেগম বলেন, “ছাত্রসংগঠনের একজন সদস্য আমাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সহযোগিতার এমন মানসিকতা আগে দেখিনি।”
রাজবাড়ী থেকে আসা অভিভাবক আব্দুল কাদের বলেন, “ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ছেলেরা অত্যন্ত দায়িত্বশীলভাবে কাজ করেছে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে তারা মানবিকভাবে পাশে ছিল, যা শিক্ষাঙ্গনের ইতিবাচক দিক।”
ছাত্রদলের আহ্বায়ক খালিদ বিন ওয়ালিদ আবির বলেন, “আমরা মানবিক জায়গা থেকে কাজ করছি, যাতে কেউ কোনো ভোগান্তিতে না পড়ে।”
ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, “পরীক্ষার্থীদের পাশে থাকা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব, সেটাই পালন করেছি।”
উল্লেখ্য, রাজশাহী কলেজে এবার ২৪টি বিভাগে মোট ৪,২৪০টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ১৫,৮৫৭ জন শিক্ষার্থী।
এর মধ্যে—
-
বিজ্ঞান বিভাগে: ৮৮০টি আসনের বিপরীতে ৮,৮৪২ জন
-
মানবিক বিভাগে: ২,৪৫৫টি আসনের বিপরীতে ৫,৬৯৫ জন
-
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে: ৯০৫টি আসনের বিপরীতে ১,৩২০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন।
রাজশাহী কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরীক্ষার ফল যথাসময়ে প্রকাশিত হবে এবং ফল প্রকাশ প্রক্রিয়াও হবে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ।
এই সফল ও শান্তিপূর্ণ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন রাজশাহী কলেজের প্রশাসন ও ছাত্রসমাজের যৌথ প্রয়াসের এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।
মিমিয়া