ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভাঙছে দুর্বল বেড়িবাঁধ, ছয় জেলায় বন্যায় পূর্বাভাস

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ৩০ মে ২০২৫

ভাঙছে দুর্বল বেড়িবাঁধ, ছয় জেলায় বন্যায় পূর্বাভাস

ছবি:সংগৃহীত

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বইছে ঝড়ো বাতাস, সাথে ঝরছে একটানা বৃষ্টি। এতে বাড়ছে নদ-নদীর পানি, প্লাবিত হচ্ছে নিচু এলাকা। দুর্বল হয়ে যাওয়া অনেক বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢুকে পড়েছে জোয়ারের পানি, জলমগ্ন হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, সড়ক ও মাছের ঘের। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, অন্তত ছয়টি জেলায় স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

 

গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজার জেলায় ঝড়ো হাওয়া ও জলোচ্ছ্বাস অব্যাহত রয়েছে। মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকেছে জোয়ারের পানি। এতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও কৃষি জমি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা ঘর, সড়ক ও বিদ্যুৎ সংযোগ। বন্ধ হয়ে গেছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সঙ্গে নৌ যোগাযোগ।

 

রাঙ্গাবালিতে টানা দুইদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ৪০০ মিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১০০ মিটার পুরোপুরি ভেঙে গেছে। কলাপাড়ার রাবনাবাদ নদীর পানি বেড়ে আশঙ্কা তৈরি করেছে পায়রা বন্দর সংলগ্ন হালুয়া ইউনিয়নে। কুয়াকাটা সৈকতের পাশে সদ্য নির্মিত ১,৩০০ মিটার ওয়াকওয়ের এক-তৃতীয়াংশ ভেঙে গেছে। প্লাবিত হয়েছে অন্তত ১৫টি গ্রাম।

 

সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। চর এলাকা কলাতলীর চর, ঢালচর, কুকরিমুকরি, চড় পাতিলা সহ বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ভেসে গেছে শতাধিক গবাদি পশু। বেশ কিছু জায়গায় বেড়িবাঁধে ছিদ্র হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাঁধ। মাছ চাষের পুকুর ও ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কয়েকটি ইউনিয়নে শত শত পরিবার পানিবন্দি।

 

সকাল থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও এখনও ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট। ঢাকা-বরগুনা নৌরুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে, তবে খেয়াঘাট দিয়ে সীমিতভাবে যাত্রী পারাপার হচ্ছে।

 

রাঙ্গাবালি উপজেলায় মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১,৩০০ পুকুর ও ৪৫০টি মাছের ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হলো চালিতাবুনিয়া ও চরমতাজ। অনেকের ভিটেমাটি ভেঙে গেছে, বসতঘর পানির নিচে। টানা বৃষ্টি, জোয়ার ও দমকা হাওয়ার কারণে মানুষ এখনো পানিবন্দি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মানুষ বারবার দুর্যোগের সময় একই ধরনের দুর্ভোগে পড়ছেন। তাঁরা বলছেন, টেকসই এবং উঁচু বেড়িবাঁধ নির্মাণই একমাত্র উপায়, যাতে ভবিষ্যতে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।

 

 

এভাবেই এক গভীর নিম্নচাপের সরাসরি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ না নিলেও তার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে দেখা দিয়েছে দুর্যোগময় পরিস্থিতি, আর উন্মোচিত হয়েছে দীর্ঘদিনের অবহেলা ও দুর্বল অবকাঠামোর বাস্তবতা।

আঁখি

×