
.
সাগর-নদী ও খালবেষ্টিত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ উপকূল প্লাবিত হয়ে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলংকরী ঝূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয় উপকূলীয় এলাকা। ঐ ঘূর্ণিঝড়ে আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ১৯৯১ সালের পর আনোয়ারার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল একটি টেকসই ও স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা। এ প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পর ৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আনোয়ারার উপকূলীয় এলাকাগুলো এখনও পুরোপুরি টেকসই বেড়িবাঁধের আবরণে সুরক্ষিত হয়নি। যার কারণে আজও উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের খবর শুনলে আঁতকে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারা উপকূলীয় এলাকার রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা বাইন্যার ঘাট, পূর্বগহিরা ফকিরহাট ও দক্ষিণ সরেঙ্গা এলাকায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন ধরেছে। জুইদন্ডী ইউনিয়নের মাঝির ঘাট থেকে নাপিত খাল, মাতবর হাট থেকে শান্তির হাট ও গোদারগোড়া অংশে ভাঙন ধরেছে। এবং রব্বাত মিয়ার বাড়ি থেকে মৌলি বাজার পর্যন্ত ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে আবার লন্ডভন্ড হয় আনোয়ারা উপকূল। ক্ষতি হয় ৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। দুর্যোগের কবল থেকে আনোয়ারায় উপকূল সুরক্ষায় ২০১৬ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক সভায় ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে কয়েক ধাপে এ প্রকল্পের বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭৭ কোটি টাকা। গত বছর জুনে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলায় টেকসই বেড়িবাঁধ নিশ্চিতে ২৪ সালের ২৭ মে নতুন করে ৩৪৬ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। যে প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুন্নবী জানান, বৃহস্পতিবার সকালে জোয়ারের প্রবল স্রোতে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এসব এলাকায় কৃষি জমি ও মৎস্যঘের ডুবে গেছে। দ্রুত সময়ে বাঁধ বাঁধতে না পারলে পুরো ইউনিয়নের শত শত ঘরবাড়ি প্লাবিত হতে পারে।
রায়পুর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা ফজল আহমদ (৬৮) জানান, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের পরিবারের দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। সেদিনের পর থেকে আজও ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে ভয় লাগে। নির্ঘুম রাত কাটায়। এখনও বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ অরক্ষিত রয়েছে। আমরা সরকারের কাছে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবি জানাচ্ছি।
নাসির আহমদ নামের আরেক বাসিন্দা জানান, ইতোপূর্বে বেড়িবাঁধের যে কাজ হয়েছে, সেখানে দুর্নীতির কারণে বেড়িবাঁধের কাজ টেকসই হয়নি। অনেক জায়গায় ব্লক ধসে গেছে। এখন ভাঙা অংশে নতুন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণে কাজ করা হচ্ছে। আমরা চাই সঠিক তদারকিতে ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে এই বেড়িবাঁধের নির্মাণকাজ করা হোক। যাতে আগের মতো কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে না পড়ে।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহিদ বলেন, আনোয়ারার উপকূলীয় বেড়িবাঁধের অরক্ষিত অংশে নতুনভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আনোয়ারার উপকূল সুরক্ষিত হয়ে যাবে।
প্যানেল