
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা নেই। নদী আর সাগরের মোহনায় চলছে চিংড়ির রেণু আহরণের উৎসব। আর সেই উৎসবে প্রতিদিন নিঃশব্দে নিধন হচ্ছে নদীর হাজারো প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার উপকূলীয় এলাকাজুড়ে—সাহেরখালী, ইছাখালী, বানচন্দ খাল থেকে শুরু করে ছোট ফেনী নদীর কাজীর হাট স্লুইচ গেট, মুহুরি রেগুলেটরের দু’পাশ, চর খোন্দকার, সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের জেলেপাড়া, সুজাপুর, লামছি—এসব জায়গায় গিয়ে দেখা গেছে এক নির্মম চিত্র। মশারি ও ঠেলা জাল টেনে নদীর বুক চিরে তুলে আনা হচ্ছে গলদা-বাগদা চিংড়ির রেণু। সেই সঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে হাজারো জলজ প্রাণী, মাছের পোনা।
স্থানীয়রা বলছেন, এসব রেণু তুলে বিক্রি করা হয় স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে। পরে তারা সেগুলো পাঠিয়ে দেন খুলনা, বাগেরহাট, যশোরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের চিংড়ি ঘের মালিকদের কাছে।
ফেনী নদীর মুহুরি সেচ প্রকল্প এলাকার মীরসরাই রেগুলেটর পয়েন্টে খুলনা থেকে আসা দুই জেলে আকাশ ও সাগর বললেন, “আমরা দুই মাসের জন্য এসেছি রেণু ধরতে। প্রতিদিন প্রায় হাজারখানেক চিংড়ির পোনা তুলি। স্থানীয় মহাজনের কাছে বিক্রি করি পিসপ্রতি ২-৩ টাকায়। চিংড়ির রেণু রেখে বাকিগুলো ফেলে দিই।”
কিন্তু সেই ‘বাকিগুলো’ যে কী পরিমাণ ক্ষতি করে, তা ভয়ংকর। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, একটি চিংড়ির রেণু আহরণের সময় গড়ে আরও ৪৬৩ প্রজাতির মাছের পোনা এবং ১,৭৬৩টি ক্ষুদ্র জলজ জীব ধ্বংস হয়।
জেলে কৃষ্ণমোহন জলদাস জানালেন, “আগে এ নদীতে প্রচুর মাছ ছিল। বাইলা, চাপিলা, লইট্টা, কাচকি—সবই মিলত। এখন নদীতে জাল ফেললে কিছুই উঠে না। কারণ ছোট থাকতে সবই ধরা পড়ে যাচ্ছে।”
মীরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, “চিংড়ির রেণু আহরণ অবৈধ। আমরা বিভিন্ন স্থানে মীরসরাই উপকূল ও মুহুরি নদীর মোহনায় অভিযান চালিয়ে জাল জব্দ করেছি। তবে যেহেতু এ কার্যক্রমের বড় অংশ ফেনী জেলার আওতায় পড়ে, সেহেতু ফেনী মৎস্য বিভাগকেই বেশি সক্রিয় হতে হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে রেণু আহরণের নামে জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে দেশের নদীগুলো মাছশূন্য হয়ে পড়বে। বন্ধ হয়ে যাবে অনেক প্রজাতির পুনরুৎপাদন প্রক্রিয়া। জলজ খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সরকার প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ সময়টিই মাছের প্রজনন মৌসুম। অথচ এই সময়েই চলছে রেণু আহরণের মহোৎসব।
মিরাজ খান