ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হালদায় নমুনা ডিম কি !

নিজস্ব সংবাদদাতা,ফটিকছড়ি

প্রকাশিত: ০৮:৩০, ২৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১০:২০, ২৯ মে ২০২৫

হালদায় নমুনা ডিম কি !

ছবি:জনকন্ঠ

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীতে প্রত্যেক বছর এপ্রিল মাস থেকে ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হয়। এই মাসের আমাবস্যা, পূর্ণিমা, মে মাসের আমাবস্যা ও পূর্ণিমা এবং জুন মাসের আমাবস্যা ও পূর্ণিমা এই ছয় তিথিতে মা মাছ নদীতে সাধারণত  ডিম ছাড়ে। অনুকূল    পরিবেশের উপর  ডিম ছাড়া নির্ভর করে থাকে। মাছের ধর্মানুসারে ডিম ছাড়ার পূর্বাভাষ হলো নমুনা ডিম দেওয়া। নমুনা ডিম দেওয়ার পর উপযুক্ত পরিবেশ পেলে মা মাছ ডিম ছেড়ে থাকে। কিন্তু এই নমুনা ডিম ছাড়ার পরও যদি উপযুক্ত পরিবেশ পাওয়া না যায় তাহলে মাছ ডিম ছাড়ে না। 

 

 

নমুনা ডিম ছাড়ার ব্যাপারে হালদা গবেষক,  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার্স রিচার্স ল্যাবরেটারির সমন্ময়ক, চট্টগ্রাম  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রানী বিভাগের অধ্যাপক ড, মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র  হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছের পূর্ণাঙ্গ ডিম ছাড়ার আগে একটা- দুইটা করে অল্প পরিমাণ ডিম ছাড়াকে স্থানীয়ভাবে নমুনা ডিম বলে। এটি হালদা নদীর মাছের প্রাক প্রজননকালীন আচরণের একটি অংশ। প্রজননকালীন সময় যখন মাছের ডিম পরিপক্ক হয় এবং নদীর পরিবেশ কিছুটা অনুকূল দেখে তখন ব্রুড মাছ পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি ডিম ছাড়ে।

 

এর মাধ্যমে মাছ পরীক্ষা করার চেষ্টা করে  তাদের ডিম নদীর এ গুনাগুনের পানি এবং পরিবেশে টিকে থাকতে পারবে কিনা! যদি তারা অনুভব করে পরিবেশ অনুকূল তাহলে এরপরের জোয়ার বা ভাটায় পূর্ণাঙ্গ ডিম ছেড়ে দেয়। স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম দেখে পরবর্তী জোয়ার বা ভাটার সময় তাদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ডিম সংগ্রহ করার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে নদীতে অবস্থান করে। যদি পরিবেশ অনুকুল না থাকে তাহলে মাছ ডিম ছাড়েনা। 

একটি প্রজনন মৌসুমে একাধিকবার নমুনা ডিম ছাড়তে দেখা যায়। নমুনা ডিম থেকে আমরা গবেষকরা নদীর ভৌত রাসায়নিক গুনাগুনের পাশাপাশি কয়েকটা তথ্য নিশ্চিত হই, তা হলো ১. নদীতে মাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করে, ২. গোনাড পরিপক্ক হয়েছে এবং ৩. মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।

 

 

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্য জায়গায়। বর্তমানে উন্মুক্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মোবাইল এবং তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে অনেক তরুণ ডিম সংগ্রহকারীরা নমুনা ডিম ছাড়লে ফেসবুকে ছবি আপলোড করে বা লাইভ ভিডিও করে। অনেক গণমাধ্যম কর্মীরা এটা দ্রুত নিউজ করে ফেলে।সারা দেশের মানুষ 'নমুনা ডিম' কি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। তারা মনে করে হালদা নদীতে মাছ ডিম ছেড়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগায় স্থানীয় অসাধু কিছু মানুষ। ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মৎস্য চাষিরা হালদার পোনা কিনতে এসে প্রতারিত হয়। এরকম বেশ কিছু প্রতারণার তথ্য তাঁর কাছে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।  এজন্য তিনি সব সময় নমুনা ডিম ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রচার না করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন । কিন্তু এখানেও আবার সমস্যা!! একটি গণমাধ্যমে  এ সংবাদ প্রচারিত হলে অন্য গণমাধ্যম  কর্তৃপক্ষ তাদের রিপোর্টারদের প্রশ্ন করে এই সংবাদ কেন পাঠায়নি। জবাবদিহিতার জায়গা থেকে তখন সবাইকে নিউজ করতে হয়। এতে দেশব্যাপী হালদা নদীর মাছের পোনার উপর মৎস্য চাষীদের আস্থাহীনতা তৈরি করে এবং হালদা ব্র্যান্ডিং এর ক্ষতি হয়। হালদা নদী এবং এর সুফলভোগীদের স্বার্থে তিনি তাঁর  নিজস্ব অবস্থান থেকে বিষয়টি সবার কাছে উপস্থাপন করেছেন বলে ও উল্লেখ করেন ।

 

আঁখি

×