
ছবি: সংগৃহীত
বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনের বিঘ্নতা, ক্রমবর্ধমান ব্যয়, শুল্ক অনিশ্চয়তা ও পরিবর্তনশীল বাণিজ্যনীতির মাঝেও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিয়ে প্রবল আশাবাদ প্রকাশ করেছে বিশ্বজুড়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্প্রতি প্রকাশিত এইচএসবিসি’র ২০২৫ সালের ‘ট্রেড পালস জরিপ’ এ উঠে এসেছে এমন তথ্য।
বিশ্বের ১৩টি বাজারের ৫,৭০০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে পরিচালিত এই জরিপে দেখা গেছে, দুই-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে শুল্ক ও বাণিজ্য অনিশ্চয়তার কারণে ব্যয় বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৩% প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদে এবং ৭২% দীর্ঘমেয়াদে ব্যয় আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে।
সাপ্লাই চেইনের বিলম্বে আয় হ্রাস জরিপ অনুযায়ী, সাপ্লাই চেইন বিলম্বের কারণে গড়ে ১৮% পর্যন্ত আয় হ্রাসের মুখোমুখি হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রায় ৫১% প্রতিষ্ঠান সাপ্লাই চেইনের ক্রমবর্ধমান খরচকে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এরই মধ্যে ৮৫% প্রতিষ্ঠান উচ্চ ব্যয় সামাল দিতে মূল্য নির্ধারণ কৌশলে পরিবর্তন এনেছে কিংবা আনার পরিকল্পনায় রয়েছে।
চ্যালেঞ্জের মাঝেও আশা জরিপের সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক দিক হলো, ৮৯% প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে যে আগামী দুই বছরে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে সফল হবে। নিয়ারশোরিং (৮৩%) এবং রিশোরিং (৭৭%) কৌশলের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে প্রযুক্তি, মিডিয়া ও টেলিকম খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তুতি ও করণীয় এইচএসবিসি জরিপে বাংলাদেশের অবস্থানও গুরুত্বপূর্ণ। জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো শুল্কের কারণে গড়ের তুলনায় কম ব্যয় বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে। তবে সাপ্লাই চেইনের বিলম্বের কারণে রাজস্বে গড়প্রতিকূল প্রভাব বিশ্বগড়ের তুলনায় প্রায় ৫% বেশি।
প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা, ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং সিমুলেশনের মাধ্যমে বহুমুখী সাপ্লাই চেইন গড়তে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রসারণে বাংলাদেশি ব্যবসারাও দৃঢ় আশাবাদী। তবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠান কৌশলগত পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে।
নতুন বাণিজ্য করিডর ও বৈশ্বিক সম্পর্ক বাংলাদেশ এখন ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে। চীনের সঙ্গেও সম্পর্ক জোরদার করছে ৫৪% প্রতিষ্ঠান। ইউরোপের সাথে ৬৫% এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ৫৮% প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিস্তারের পরিকল্পনায় রয়েছে।
এইচএসবিসি কর্মকর্তাদের বক্তব্য এইচএসবিসি গ্লোবাল ট্রেড সলিউশনের প্রধান ভিভেক রামাচান্দ্রন বলেন, "শুল্ক ও বাণিজ্য অনিশ্চয়তার মধ্যেও প্রতিষ্ঠানগুলো সহনশীলতা ও অভিযোজন ক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে। টিকে থাকতে হলে কৌশলগত পরিবর্তন ও দৃঢ় অংশীদারিত্ব অপরিহার্য।"
এইচএসবিসি বাংলাদেশের সিইও মো. মাহবুব উর রহমান বলেন, "জরিপের ফলাফল প্রমাণ করে, বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রস্তুত এবং আশাবাদী মনোভাব বজায় রেখেছেন। আমরা সবসময় আমাদের গ্রাহকদের পাশে আছি তাদের বৈশ্বিক সুযোগের সাথে যুক্ত করতে।"
📊 বিশ্ববাণিজ্য নিয়ে এমনই এক প্রতিকূলতার ভেতরেও আত্মবিশ্বাসের বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এইচএসবিসি’র সর্বশেষ জরিপ। ব্যবসার নতুন গন্তব্যে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ব ও বাংলাদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো।
আসিফ