
যশোরের ধর্মতলা কর্মকারপাড়ার ভূমিহীন দলিত ও আদিবাসী পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ চেষ্টা বন্ধ ও স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিডিইআরএম ও নাগরিক উদ্যোগ। বৃহস্পতিবার বিকালে যশোর প্রেস ক্লাবের শহীদ সাংবাদিক আর এম সাইফুর আলম মুকুল মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ‘বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)’-কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তাগণ জানান, যশোর জেলার সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের ধর্মতলা কর্মকারপাড়ায় (আদিবাসীপাড়া) সুদীর্ঘকাল থেকে ৫৩টি দলিত ও আদিবাসী পরিবারের বাস। কর্মকার, বাগদী ও ঘাসীমালো জনগোষ্ঠীর এই মানুষেরা তৎকালীন সময়ে অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে এ অঞ্চলে রেললাইন স্থাপন, কৃষি, দিনমজুরিসহ সমাজের নানা রকম সেবামূলক পেশায় যুক্ত হয়। বংশপরম্পরায় আজ অবধি তারা দেশের মাটি ও মানুষের সেবায় নিজেদের নিরলস শ্রম, মেধা ও মূল্যবান সময় বিনিয়োগ করে চলেছে। এই পরিবারগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এখানে বসবাস করে আসছে এবং তারা সমাজের অত্যন্ত প্রান্তিক ও বঞ্চিত অংশ।
নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগের সাথে জানান, ধর্মতলা কর্মকারপাড়ার ভূমিহীন দলিত ও আদিবাসী পরিবারগুলো সাম্প্রতিক সময়ে উচ্ছেদের হুমকিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে এই এলাকায় বাস করে আসা এই পরিবারগুলি আজ জীবন-জীবিকা হারানোর আশঙ্কায় দিন পার করছে।
বক্তাগণ বলেন, ধর্মতলার কর্মকারপাড়ার মানুষগুলো কোনো ‘অবৈধ দখলদার’ নয়। তারা এ দেশেরই নাগরিক, এবং তাদের বাসস্থানের অধিকার একটি মৌলিক মানবাধিকার। তাদের জীবন, অস্তিত্ব এবং সম্মান রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।
এর প্রেক্ষিতে নেতৃবৃন্দ সংবাদ সম্মেলনে ৬টি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হল, ধর্মতলা কর্মকারপাড়ার সকল ভূমিহীন দলিত ও আদিবাসী পরিবারের উপর উচ্ছেদের অপচেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষার্থে এবং মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরিবারগুলির শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবিকার অধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা প্রদান করতে হবে। আদিবাসী ও দলিত জনগোষ্ঠীর জীবনধারা ও সংস্কৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ‘পুনর্বাসন ছাড়া কোনো উচ্ছেদ নয়’-এই নীতি অনুসরণ করে অবিলম্বে এই পরিবারগুলির জন্য উপযুক্ত জমি, আবাসন এবং মৌলিক নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এবং পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে তাঁদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পেশাগত জীবনধারাকে মর্যাদা দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য রিনা কর্মকার, উষা রানী বাগদী, সুমিত্রা কর্মকার। সংহতি জানিয়ে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহবায়ক রাশেদ খান, শাশ্বতী দলিত নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা’র নির্বাহী পরিচালক আয়নামতি বিশ্বাস, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)-যশোর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন দাস, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ-যশোর সদর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বাবলু দাস, নাগরিক উদ্যোগের সহকারী মাঠ সমন্বকারী (যশোর) নাসির উদ্দীন, যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরন লাল সরকার, দলিত যুব ফোরাম-যশোর এর সাধারণ সম্পাদক বিষ্টু দাস মাইকেল, সহ-সাধারণ সম্পাদক রিপন সরকার প্রমুখ।
‘বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম)’-কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শিপন কুমার রবিদাস জানিয়েছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এই মানুষগুলো সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী পরিচালক গোলাম কিবরিয়া জানান, ধর্মতলায় উচ্ছেদ নোটিশের বিষয়টি তার জানা নেই। যে প্রকল্পের অধীনে ওই এলাকায় কাজ হচ্ছে, সেই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি বলতে পারবেন।
রাজু