
ছবি : সংগৃহীত
ইচ্ছে শক্তিকে পুঁজি করে পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণে পথে নেমেছে মহম্মদ মিলন(২৪) ও মোছাঃ সামিয়া(২১) নামের এক দম্পতি। এই পরিব্রাজক দম্পতি তাদের ভ্রমনের ২২তম দিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা অতিক্রম করে ৮৭১ কিলোমিটার হেঁটে বৃহস্পতিবার (১ মে) বেলা তিনটায় উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলা শহরে পৌছেন এই দম্পতি।
এ সময় তাদের স্বাগত জানান নীলফামারী জেলা ক্রীড়া অফিসার আবুল হাসেম। নীলফামারীতে রাত্রীযাপন শেষে শুক্রবার (২ মে) ভোর ৫টায় এই দম্পতি নীলফামারী থেকে তেঁতুলিয়া পথে হাটা শুরু করেন। আর মাত্র ১৫৬ কিলোমিটার পর তারা পৌছে যাবেন তেঁতুলিয়ায়।
এই দম্পক্তি পহেলা মে সন্ধ্যায় নীলফামারী প্রেস কাবে এসেছিলেন সাংবাদিকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে। সেখানে তারা জানালেন তাদের এই পায়ে হাটা ভ্রমনের প্রধান থিম বা কারন। দেশে সম্প্রতিকালে বৃদ্ধি পেয়েছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষন সহ নারীদের প্রতি বিভিন্ন অপরাধের কারনে আত্মহত্যা প্রবনতা। তাই এই দম্পতি তাদের এই ভ্রমনের নাম দিয়েছেন “প্রতি কদমে একতা- সমাজের জন্য সমতা”।
তাই নারীদের প্রতি এমন সহিংসতা প্রতিরোধ ও আত্মহত্যা থেকে নারীদের বাঁচাতে এবং সচেতন করতে পায়ে হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ভ্রমণ করেছেন মিলন সামিয়া এই দম্পক্তি। এটিকে তারা সামাজিক নিরাপক্তার বেষ্টনি হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন। এই দম্পক্তি বলছেন প্রবাদ আছে দশের লাঠি একের বোঝা, তেমনি পায়ের প্রতিটি কদমকে আমরা একতা বলছি। সমতা বলতে এই সমাজের মানুষ অপরাধীদের মোকাবেলা করতে এক হয়ে কাজ করবে। কারন একজন ধর্ষিতা বা নির্যাতিতা নারী এবং আত্মহত্যার শিকার নারীদের প্রত্যেকের প্রাণ মূল্যবান। এই মূল্যবান প্রাণকে আমরা অপরাধীদের জন্য হারাতে দিতে চাইনা। আমাদের একজোট হয়ে অপরাধীদের মোকাবেলা করতে হবে।
পাবনা সদরের এই দম্পক্তি এখনও লিখাপড়া করছেন। পাবনার সরকারি কলেজে মিলন অর্নাস শেষ বর্ষে এবং সামিয়া অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। দুই বছর হয় তাদের বিয়ে হয়েছে। মিলন সাইকিন ও সাঁতারে যেমন পারদর্শী তেমনি সামিয়াও ম্যারাথন দৌড় ও সাঁতারেও তুখোড়। দুজনের ঘরে রয়েছে সফলতার ভুড়ি ভূড়ি পুরস্কার।
গত ৮ এপ্রিল এই দম্পতি পায়ে হেটে টেকনাফ থেকে ভ্রমণ শুরু করেন। এই পথযাত্রায় এক নতুন আঙ্গিকে দেশকে দেখেছেন। শুধু দেশ ভ্রমণেই নয়, চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে তাদের জীবনের মূল্য সম্পর্কেও সচেতন করেছেন।তবে এই ভ্রমণে সাধারণ মানুষসহ সকলের সাড়া পেয়েছেন বলে জানান তারা।এই দম্পতি জানান, চলার এই পথে তারা নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু নতুন কিছু শিখতে, মানুষকে জীবন সম্পর্কে জানাতে ও সচেতন করতে পিছু হটেননি। প্রথম দিন তারা টানা ৫৫ কিলোমিটার হেটেছেন। দ্বিতীয় দিন ৩৫ কিলোমিটার,তৃতীয় দিন ৪৫ কিলোমিটার। এভাবেই চলছিল দিন রাত। যখন টাঙ্গাইল জেলা পাড়ি দিয়ে উত্তরবঙ্গের সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করবেন তখন হোচট খেতে হয় যমুনা সেতু চত্বরে এসে এই দম্পত্তিবে। তারা জানালেন নিয়ম অনুযায়ী এই সেতুতে পায়ে হেটে পারাপারের নিয়ম নেই। তাই টাঙ্গাইলের বেশ কিছু পরিচিতদের সহায়তা নেই আমরা। সিদ্ধান্ত নেই টাঙ্গাইয়ের প্রান্ত থেকে সিরাজগঞ্জের প্রান্তে পৌছতে যমুনা নদী সাঁতার দিয়ে পারি দিবেন।
যে চিন্তা সেই কাজ। পিঠের ব্যাগ দেয়া হলো নৌকায়। আর তারা দুজনে সাঁতার কেটে যমুনা নদী পার হলেন । নদীতে ছিল অনেক স্রোত। এই স্রোতের সাথেও যুদ্ধ করতে হয় এই দম্পতিকে। এভাবে তারা হাটতে হাটতে ভ্রমনের ২২তম দিন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা অতিক্রম করে ৮৭১ কিলোমিটার পথে নীলফামারী পৌছেন। এখনও তেঁতুলিয়া পৌছতে বাকী রয়েছে ১৫৬ কিলোমিটার। তারপর ভ্রমন শেষে পরবর্তি কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। দম্পতি বললেন নীলফামারী থেকে রওনা দিয়ে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় রাত্রী যাপন, পরের দিন পঞ্চগড় জেলা শহরে গিয়ে রাত্রীযাপন করবো। এরপর পঞ্চগড় থেকে টানা ৪০ কিলেমিটার পথ হেটে তেঁতুলিয়া পৌছে যাবো। চলার পথে টেকনাফ থেকে নীলফামারী পর্যন্ত পৌছানো পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে তাদের তোলা ছবি ও ভিডিও নীলফামারী প্রেস ক্লাবে প্রদর্শন করেন এই পরিব্রাজক দম্পতি।
তাহমিন হক ববী
আঁখি