ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে উৎসবে মেতে উঠলো বাঞ্ছারামপুরের জনপদ

সোহাইল আহ‌মেদ, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবা‌ড়িয়া

প্রকাশিত: ২১:২৭, ১৫ এপ্রিল ২০২৫

বৈশাখের দ্বিতীয় দিনে উৎসবে মেতে উঠলো বাঞ্ছারামপুরের জনপদ

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনের আমেজ কাটতে না কাটতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার গ্রামগঞ্জে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা গেছে দ্বিতীয় দিনেও। স্থানীয়ভাবে একে অনেকে ‘দ্বিতীয় বৈশাখ’ বলে ডাকেন। এ দিনেও গ্রামের মানুষের মধ্যে থাকে নানা রকম ঐতিহ্যবাহী আয়োজন আর মিলনমেলার আমেজ।

বাঞ্ছারামপুরের রুপসদী, ফরদাবাদ, দরিকান্দি, গোপিনাথপুর, শশই, উজানচর, আইয়ুবপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে সকালে আয়োজন করা হয় খিচুড়ি, পাঁপড়, ভর্তা আর গরম গরম শাকের ভোজ। কোথাও আবার পান্তা ভাত আর ভাজা মাছ দিয়েও চলে বৈশাখের দ্বিতীয় দিনের বিশেষ খাবার আয়োজন।

শিশু-কিশোররা দল বেঁধে গ্রামের ঝোপঝাড়, আমগাছের তলা, বাঁশবাগান থেকে আম কুড়ানোর ধুম ফেলে। কেউ কেউ বড়শি হাতে নিয়ে ছুটে যায় পুকুরপাড়ে। কোথাও কোথাও বড়রা পুরোনো দিনের লাঠিখেলা, হাডুডু, দাড়িয়াবান্ধার আসর বসান।

রুপসদী গ্রামের প্রবীণ শিক্ষক আব্দুল মতিন মিয়া বলেন, ‘আমাদের শৈশবে বৈশাখের দ্বিতীয় দিনেও জমজমাট উৎসব হতো। আম কুড়ানো, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা, হাডুডুর মাঠ মুখর থাকতো। এখনো আমরা এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি।’

দরিকান্দি গ্রামের তরুণ আপেল মাহমুদ জানান, ‘বন্ধুদের নিয়ে সকাল থেকে খিচুড়ি রান্না করেছি। এরপর আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়েছে। বিকেলে হবে হাডুডু খেলা। বৈশাখের দ্বিতীয় দিনটাও আমাদের কাছে ভীষণ আনন্দের।’

ফরদাবাদ গ্রামের আবু ইউসুফ বলেন, ‘প্রথম দিনের আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই দ্বিতীয় দিনেও মেলার মতো উৎসব হয় আমাদের গ্রামে। ছোট-বড় সবাই অংশ নেয়।’

উজানচর গ্রামের গৃহবধূ রো‌জিনা আক্তার বলেন, ‘প্রতিবছর এই দিনে আমরা পরিবারের সবাই মিলে খিচুড়ি রান্না করি। দুপুরের পর পুকুরপাড়ে যাই, ছেলে-মেয়েরা আম কুড়ায়। এটা আমাদের পরিবারের অনেক দিনের অভ্যাস।’

এদিকে, বাঞ্ছারামপুরের স্থানীয় বাজারগুলোতেও এদিন ছিলো ব্যাপক ভিড়। শিশুদের খেলনা, দেশি খাবার আর গ্রামীণ হস্তশিল্প বিক্রেতাদের মুখে ছিলো আনন্দের হাসি।

প্রবীণরা জানান, বৈশাখের দ্বিতীয় দিনের এই উৎসব-আয়োজন গ্রামীণ সমাজকে একত্রিত করে। তারা চান, এই ঐতিহ্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে টিকে থাকুক।

বৈশাখের প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনটিও বাঞ্ছারামপুরের জনপদে বয়ে আনে প্রাণের উচ্ছ্বাস, মিলনমেলা আর শিকড়ের টান।

 

রাজু

×