ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

চলছে ১৭ হাজার অবৈধ লেগুনা ॥ বাসের অভাবে বন্ধ ২৫৮টি রুট 

অধিকাংশ বাসের রুট পারমিট নেই

ইবরাহীম মাহমুদ আকাশ

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫

অধিকাংশ বাসের রুট পারমিট নেই

রাজধানীর বেশিরভাগ বাস চলছে রুট পারমিট ছাড়াই

রাজধানীর বেশিরভাগ বাস চলছে রুট পারমিট ছাড়াই। কিছু কোম্পানির বাসের রুট পারমিট থাকলেও তা নির্ধারিত রুটে চলছে না। বেশি যাত্রীর আশায় এক রুটে একাধিক কোম্পানির বাস চলাচল করছে। এতে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ বাসের অভাবে বন্ধ রয়েছে ২৫৮টি রুট। এছাড়া ঢাকায় ২৭ হাজারের বেশি লেগুনা চলছে অবৈধভাবে।

২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে বাস ও লেগুনার রুট পারমিট। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীতে রুট পারমিটবিহীন কি পরিমাণ বাস-মিনিবাস চলাচলÑকরে এর কোনো পরিসংখ্যান নেই সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কাছে। 
জানা গেছে, ঢাকায় বাস-মিনিবাসের রুট পারমিট দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি)। এই কমিটির আহ্বায়ক হলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার। এ ছাড়া এ কমিটিতে রয়েছেন সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। ২২ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সদস্য সচিব হলেন বিআরটিএর ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক। কিন্তু গত পাঁচ বছর যাবৎ এই কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। তাই ২০১৮ সাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে বাস ও লেগুনার রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানির মাধ্যমে বাস পরিচালনা’ পদ্ধতি প্রবর্তনের কার্যক্রম সমন্বয় করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)র মেয়র বা প্রশাসক। ঢাকা উত্তর সিটি করোপরেশনের ডিএনসিসি মেয়র বা প্রশাসক এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

এ ছাড়া ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক, ডিএমপির কমিশনার, রাজউক চেয়ারম্যান, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, বিআরটিসির চেয়ারম্যান, সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং পরিবহন বিশেষজ্ঞদের এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এই কমিটি হওয়ার পর থেকে ঢাকায় বাস রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি থাকায় বর্তমানে আরটিসির কার্যক্রম স্থবির অবস্থায় রয়েছে। আরটিসি আগে যে সব রুট অনুমোদন দিয়েছিল সেগুলো বর্তমানে চলাচল করছে। বর্তমানে রুটগুলো কি অবস্থা-এর কোনো হালনাগাদ তথ্য আমাদের কাছে নেই।’ তবে একটি বাসকে তিন বছর পর পর রুট পারমিট নবায়ন করতে হয় বলে জানান তিনি। 
আড়াইশ’র বেশি রুটে বাস নেই ॥ ঢাকা মহানগরীতে বাস-মিনিবাসের রুট পারমিট দেয় ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি)। এই কমিটির তথ্যমতে, বর্তমানে ঢাকা মহানগরীতে ৩৮৮টি রুটে বাস-মিনিবাস চলাচলের অনুমোদন দিয়েছে বিআরটিএ। এর মধ্যে ২টি রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ২৫০ এর অধিক রুট অচল অবস্থায় রয়েছে। ১২৮টি সচল রুটে ৭ হাজার ৯১টি বাস চলাচলের অনুমোদন রয়েছে।

এর মাঝে ৩ হাজার ৪২৭টি বাস নিজ রুটে চলাচল করে। এ ছাড়া ২ হাজার ১৮টি বাস অন্য রুটে চলে। পাশাপাশি ১ হাজার ৬৪৬টি বাসের কোন রুট পারমিট নেই। অচল রুট ও বেশিরভাগ রুট পারমিটবিহীন বাস চলাচলের কারণে সড়কে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। তাই বাসে যাত্রী তোলার অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 
আরটিসির তালিকায় দেখা গেছে, রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এ-২২৯ নম্বর রুটে বিভিন্ন মালিকের ২০টি সিলিং (মোটরযান) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইস্যুকৃত রুট পারমিট মোটযানের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮টি। কিন্তু বাস্তবে এই গাড়ি চলে ৩৬টি। অন্য রুটে গাড়ি রয়েছে ২২টি। রুট পারমিটবিহীন গাড়ি রয়েছে ১৪টি। ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ মোটরযান রয়েছে ৮টি। একই অবস্থা এ-২৩৬ নম্বর রুটের।

সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, লিংক রোড় হয়ে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত এই রুটে ২০ মোটরযানের অনুমোদন রয়েছে। তবে ইস্যুকৃত বাসের সংখ্যা ৯টি। পরিবহন কোম্পানির নাম উৎসব ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। কিন্তু রুটে সব বাস চলাচল করে গুলিস্তান থেকে। এই রুটে ৪০টি বাস চলাচল করে। একটি বাসেও রুট পারমিট নেই। রাজধানীর বেশিরভাগ রুটের একই অবস্থা বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা মহানগরীতে আরটিসির অনুমোদিত রুটের সংখ্যান ছিল ৩৮৬টি। কিন্তু অনেক রুটে এখন আর বাস চলে না। অনুমোদন নেয়ার পর বাস নামেনি এমন রুটও আছে। আবার এক রুটে অনুমোদন নিয়ে অন্য রুটে চলে। অনেকে আবার রুট পারমিট ছাড়াই কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বাস চালাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। পুলিশের অসহযোগিতার কারণে পুরোপুরি কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে গণপরিবেহন বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গণপরিবহনের কোম্পানিগুলো। পৃথিবীর কোনো দেশে নেই, যেখানে এত কোম্পানি ভিত্তিক গণপরিবহন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। প্রথমে বাস রুট পারমিটের পরিবর্তন আনতে হবে। এক্ষেত্রে এক রুটে একাধিক কোম্পানির বাস চলাচল করতে পারবে না।

একই রুটে বিভিন্ন কোম্পানির বাস চলাচলের কারণে প্রতিযোগিতা করে যত্রতত্র থেকে যাত্রী ওঠানো-নামানো করা হয়। এতেই সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। গুটি কয়েক কোম্পানির মাধ্যমে পুরো ঢাকা শহরের বাস সার্ভিস পরিচালনা করতে হবে। তা না হলে ঢাকাকে রক্ষা করা যাবে না। অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে বাস মালিকরা।’ 
ঢাকায় বাস বেশি, যাত্রী পরিবহন কম ॥ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়, রাজধানীতে চলাচল করছে নিবন্ধিত প্রায় ৬ হাজার বাস-মিনিবাস। আর বাস কোম্পানি রয়েছে ১৩৭টি। এদের মধ্যে শতাধিক বাস রয়েছে মাত্র সাতটি কোম্পানির। ৭৫টি কোম্পানির মালিকানায় ৫০টি কম সংখ্যক বাস। আর ৮৫০টি বাসের মালিক পৃথক পৃথক ব্যক্তি। এতে একই রুটে চলে বিভিন্ন কোম্পানির বাস। আবার কিছু রুটে ব্যক্তি মালিকানার বিভিন্ন বাস-মিনিবাস চলাচল করে। ফলে প্রতিযোগিতা লেগেই আছে। 
এতে আরও বলা যায়, ঢাকার ৬ হাজার বাসে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লাখ মানুষ চলাচল করে। অর্থাৎ বাসপ্রতি দৈনিক ৫০০ যাত্রী যাতায়াত করতে পারে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মুম্বাই শহরে বাস রয়েছে আরও কম, ৩ হাজার ৬০০টি। তবে এসব বাসে যাত্রী বহন করা হয় দৈনিক গড়ে ৪৮ লাখ। অর্থাৎ বাসপ্রতি যাত্রী পরিবহনের হার ১ হাজার ৩৩৩। আর সিঙ্গাপুর শহরে বাস রয়েছে ৩ হাজার। এর মাধ্যমে ঢাকার চেয়ে বেশি প্রায় ৩২ লাখ যাত্রী দৈনিক পরিবহন করা হয়। এক্ষেত্রে বাসপ্রতি যাত্রীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৭।
এ বিষয়ে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সিঙ্গাপুর ও মুম্বাইয়ে রয়েছে পরিকল্পিত বাস নেটওয়ার্ক। এক রুটে চলাচল করে একটি কোম্পানির বাস। এজন্য এত বেশি সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করা যায়। আবার বাসগুলোতে যাত্রীদের খুব বেশি ভিড়ও হয় না। অথচ ঢাকার বিভিন্ন বাসে যাত্রীদের প্রচ- চাপ থাকে সব সময়ই। যাত্রীদের মধ্যেও বাসে ওঠার জন্য প্রতিযোগিতা লেগে যায়।

অনেক যাত্রী নিয়মিতই দাঁড়িয়ে এমনকি দরজায় ঝুলেও যাতায়াত করেন। গত এক দশকে বাসে যাত্রী চলাচলের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আগামীতে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে পরিকল্পিত বাস নেটওয়ার্ক না গড়ে তোলা গেলে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ করে একটি রুটে বাস পরিচালনার দায়িত্ব একটি কোম্পানির কাছে ছেড়ে দিতে হবে।
অবৈধভাবে চলছে ১৭ হাজার লেগুনা ॥ বিআরটিএর ভাষায় লেগুনাকে ‘হিউম্যান হলার’ নামে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। সারাদেশে ১৭ হাজারের বেশি লেগুনার রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে এর সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। কিন্তু এসব গণপরিবহন চলাচলের কোনো রুট পারমিট দেওয়া হয় না। তাই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধ এসব ‘হিউম্যান হলার’ চলছে বিশৃঙ্খলভাবে।

স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা ও ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে এই সব গণপরিবহন চলাচল করছে বলে স্থানীয়রা জানান। এ সব গণপরিবহনে নেই কোনো সরকারি ভাড়ার তালিকা। তাই প্রতিনিয়ত ভাড়া যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে বাকবিত-া হয়। 
এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘সারাদেশে ৩০ হাজারের বেশি লেগুনা চলাচল করে। এ সব গণপরিবহনে নেই রুট পারমিট। স্থানীয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের লোকদের ম্যানেজ করে এসব অবৈধ লেগুনা চলাচল করছে। এ ছাড়া বাসের ভাড়া নির্ধারণের কমিটি থাকলেও লেগুনা ভাড়া নির্ধারণের কোনো কমিটি নেই। তাই ইচ্ছেমতো ভাড়া নির্ধারণ করা এসব গণপরিবহনে।

সড়ক-মহাসড়কের দিয়ে যাত্রী বোঝাই করে চলাচল করে এসব লেগুনা। প্রতিটি লেগুনায় আট-দশজন যাত্রী নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ওঠানো হয় এর চেয়ে বেশি। পাদানিতে চারজন যাত্রী দাঁড়িয়ে নেওয়া হয়। এতে বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বেশিরভাগ লেগুনার চালক কম বয়সী ও লাইসেন্স থাকে না।’ তাই লেগুনা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নীতিমালা থাকা দরকার বলে জানান তিনি। 
ঢাকার প্রায় শতাধিক রুটে অবৈধভাবে চলাচল করে এসব লেগুনা। এর মধ্যে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে জিগাতলা, আজিমপুরের ট্যানারি মোড় থেকে নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর থেকে শ্যামলী, ফার্মগেট থেকে ৬০ ফিট, নিউমার্কেট থেকে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল, লালবাগ কেল্লার মোড়-গুলিস্তান, চকবাজার-গুলিস্তান, সেকশন-গুলিস্তান, বিডিআর গেট-গুলিস্তান, আজিমপুর-গুলিস্তান, খিলগাঁও সিপাহীবাগ-গুলিস্তান, গুলিস্তান-মালিবাগ রেলগেট, গুলিস্তান-গেন্ডারিয়া, গুলিস্তান-জুরাইন, সদরঘাট-পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী-শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী-ডেমরা, যাত্রাবাড়ী-স্টাফ কোয়াটার, গুলিস্তান-শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী-সাইনবোর্ডসহ প্রায় শতাধিক রুটে চলাচল করছে এ সব গণপরিবহন। ঢাকায় চলাচল করা সব লেগুনা অবৈধ বলে বিআরটিএর কর্মকর্তারা জানান। 
এ বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) শীতাংশু শেখর বিশ^াস জনকণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় লেগুনার রুট পারমিট বন্ধ রয়েছে ২০১৮ সাল থেকে। বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির গঠনের পর বাস ও লেগুনার সকল রুট পারমিট বন্ধ করা হয়। তখন একটি সিদ্ধান্ত ছিল যে ঢাকায় ছোট যানবাহন চলাচলের আর অনুমোদন দেওয়া হবে। তাই লেগুনার রেজিস্ট্রেশনও বন্ধ রয়েছে।’ ঢাকায় যে সব লেগুনা চলাচল করছে এগুলো সব অবৈধ বলে জানান তিনি।

×