
ছবি: সংগৃহীত
ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা অষ্টম দিনে গড়িয়েছে। এর মাঝেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক ভয়াবহ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যা ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বকে ঘিরে ক্ষমতার ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আলোচনা উসকে দিয়েছে।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা ঠিক জানি কোথায় লুকিয়ে আছেন তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ (আয়াতুল্লাহ খামেনি)...তবে এখনই তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেই।” এরপর তিনি তেহরানের কাছে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’-এর চূড়ান্ত আহ্বান জানান, যদিও সরাসরি সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আরও একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘এটি সংঘর্ষ বাড়াবে না, বরং শেষ করে দেবে। আমরা ইতিমধ্যেই তাদের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যবস্তু করেছি।’
ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর আওতায় ইরানের বিভিন্ন পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে তেহরান থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তখনই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঙ্কার দেন, ‘ইরানি জাতিকে কোনোভাবেই আত্মসমর্পণ করানো যাবে না।’ তিনি হামলাকারীদের ‘সীমাহীন ক্ষতির’ হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, ‘জায়নবাদিদের প্রতি কোনো দয়া দেখানো হবে না।’
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে এখন প্রশ্ন উঠছে—আয়াতুল্লাহ খামেনির পরে ইরানের নেতৃত্বে কে আসবেন? চলুন দেখে নিই সম্ভাব্য শীর্ষ প্রার্থীদের তালিকা।
মোজতাবা খামেনি
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির দ্বিতীয় পুত্র। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড (IRGC) এবং রক্ষণশীল রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যে গভীর প্রভাব রয়েছে তার। রাজনৈতিকভাবে প্রস্তুত হলেও তার প্রার্থীতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, কারণ অনেকেই মনে করেন, এটি উত্তরাধিকারমূলক ক্ষমতা গ্রহণের নজির তৈরি করবে।
আলিরেজা আরাফি
শীর্ষ ধর্মীয় আলেম, ‘অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস’-এর সদস্য এবং কোম ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রের প্রধান। গার্ডিয়ান কাউন্সিলেরও সদস্য। কঠোর রক্ষণশীল এবং ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে রয়েছে শক্ত অবস্থান।
আয়াতুল্লাহ হাশেম হোসেইনি বুশেহরি
‘অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস’-এর প্রথম উপ-সভাপতি। কোমের ইসলামি সমিতিরও প্রধান। খামেনির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং প্রায়ই তার পক্ষে শুক্রবারের জুমার খুতবা প্রদান করেন।
আলি আসগর হেজাজি
খামেনির দফতরের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা। ইরানের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে তার রয়েছে গোপন শক্তিশালী অবস্থান। পর্দার অন্তরালে থেকে নীতিনির্ধারণে প্রভাব খাটান।
গোলাম হোসেইন মহসেনি এজেই
বর্তমান বিচারপ্রধান এবং সাবেক গোয়েন্দা মন্ত্রী। নিরাপত্তা ও আইন ব্যবস্থা ঘিরে তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। কট্টরপন্থী ও খামেনির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।
মোহাম্মদ মোহাম্মাদি গোলপায়েগানি
দীর্ঘদিন ধরে খামেনির প্রধান সহকারী বা স্টাফ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে দক্ষ, যদিও প্রকাশ্যে খুব একটা আসেন না।
আলি আকবর ভেলায়েতি
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা। পরমাণু আলোচনা এবং কূটনৈতিক অভিজ্ঞতায় দক্ষ। রক্ষণশীল শিবিরে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।
কমাল খারাজি
আরেকজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বর্তমানে ইরানের কৌশলগত পররাষ্ট্র পরিষদে আছেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি তাকে এগিয়ে রাখে।
আলি লারিজানি
সাবেক পার্লামেন্ট স্পিকার ও পরমাণু আলোচক। মাঝামাঝি রক্ষণশীল অবস্থানে থাকা লারিজানি ইরানের বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মধ্যেই গ্রহণযোগ্য। তার বাস্তববাদী অবস্থান তাকে আপসহীন ও যোগ্য প্রার্থী করে তুলতে পারে।
রেজা পাহলভি (যদি শাসনব্যবস্থা পাল্টায়)
ইরানের সর্বশেষ রাজা মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভীর পুত্র রেজা পাহলভি। তিনি বর্তমানে নির্বাসনে। অনেক প্রবাসী ইরানি ও দেশের ভিতরের কিছু বিরোধী গোষ্ঠীর কাছে তিনি জনপ্রিয়। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ইরানের পক্ষে অবস্থান তার। যদিও কেবল শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন হলে তার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
সার্বিকভাবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি ভবিষ্যতে বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক চাপের মুখে পড়ে, তাহলে খামেনির পরবর্তী উত্তরাধিকারী বেছে নেওয়া দেশটির রাজনীতি ও নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বর্তমান সংঘর্ষ যত গভীরে যাচ্ছে, ততই ইরানে ক্ষমতার উত্তরাধিকারের প্রশ্নটি সামনে চলে আসছে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব