ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈসাবির বর্ণিল উৎসব

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি

প্রকাশিত: ২২:০৬, ১০ এপ্রিল ২০২৪

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বৈসাবির বর্ণিল উৎসব

হাতে হাত রেখে নাচ ও গান পরিবেশন করছেন তরুণ-তরুণীরা। 

বৈসাবির আমেজ পাহাড় সাজছে। বর্ণিল আয়োজনে পালিত হচ্ছে  পাহাড়ের ঐতিহ্যের  এ উৎসব। উৎসব সূচনায় ‘জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিতকরণে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অধিকতরভাবে এগিয়ে আসুন’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু উদযাপন কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ণিল শোভাযাত্র ও  মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বুধবার রাঙ্গামাটিতে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, চাংক্রান ও বিহু উৎসবের সূচনা কালে  আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনরা পার্বত্যবাসীর নানা বঞ্চনা কথা তুলে ধরেছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের প্রাণের উৎসব হলো বৈসাবি।  প্রতি বছর স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে পাহাড়ের প্রতিটা পল্লীতে এই উৎসবের আমেজ দেখা যায়।  

অনুষ্ঠানে বক্তরা  আক্ষেপ করে বলেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যতদিন পর্যন্ত পুর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হবে না ততদিন পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না বলেও উল্লেখ করেন তারা।

ওইদিন সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে আয়োজিত বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, চাংক্রান ও বিহু২৪ উদযাপন কমিটির ব্যানারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। কমিটির আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত উপসচিব প্রৃকতি রঞ্জন চাকমার সভাপতিতে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহসভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য উষাতন তালুকদার, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট চঞ্চু চাকমা, রাঙ্গামাটি জর্জকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবি সুস্মিতা চাকমা ও লেখক শিশির চাকমা প্রমুখ। 

অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্যা শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ান। 

বক্তারা বলেন, আমাদের মৌালিক অধিকার, মানবাধিকার প্রতি পদে পদে লংঘন করা হচ্ছে। নিজেদের কষ্টের কথা বলতে পারছেন না কারো কাছে। 

অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ব্যানার ও পেস্টুন হাতে অংশ নেন।
জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করণে পার্বত্য চুক্তি পুর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে অধিকতরভাবে এগিয়ে আসুন।

স্লোগানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা  বলেন, দীর্ঘ ২৬ বছরেও পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়সমুহ বাস্তবায়ন করা হয়নি। জুম্মদের সাংস্কৃতিক অধিকারসহ রাজনৈতিক, সামাজিক, শাসনতান্ত্রিক ও ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণাঙ্গ ও দ্রুত বাস্তবায়নের শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার আহব্বান জানান। । 

এর আগে সকালে পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখোয়াসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার শিল্পিরা নিজেদের স্ব-স্ব জাতীয় পোশাক পরে নাচ-গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।

আলোচনা সভা শেষে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়। ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাঙ্গামাটি মারী স্টেডিয়ামে পাহাড়ের  জুম্ম খেলাধুলা, বলি খেলা, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান  হবে বলে জানিয়েছেন উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার। ১২ এপ্রিল রাঙ্গামাটি রাজবন বিহার ঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে ফুল নিবেদনের মধ্যে দিয়ে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, চাংক্রান, বিহু পাহাড়ের সর্ববৃহৎ সামাজিক উৎসবের সুচনা করা হবে বলেও জানান তিনি। 

এসআর

×