ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বিলীন ফসলি জমি

অসময়ে তিস্তায় ভাঙন

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১৯ মার্চ ২০২৪

অসময়ে তিস্তায় ভাঙন

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর এলাকায় তিস্তার ভাঙন

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চ-িপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। এক চর ভেঙে আরেক চর গড়ে প্রতিবছর। স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকানোর কোনো ব্যবস্থা আজও গ্রহণ করা হয়নি। সে কারণে সারাবছর ভাঙনের কবলে ফসলি জমি। ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন তিস্তার চরের মানুষজন। সরেজমিন উপজেলার হারপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চর ঘুরে ফিরে দেখা গেছে ভাঙনের দৃশ্য।

নিমিষের মধ্যে ভেঙে যাচ্ছে উঠতি ফসলসহ আবাদি জমি। গোটা চর এখন কৃষির সম্ভাবনার অঞ্চল। প্রতিটি চরে নজর কাড়ার মতো ভুট্টা, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, বাদাম, গম, তিল, তিশি, রসুন, কুমড়াসহ নানান প্রজাতের ফসলে ভরে উঠেছে। কিন্তু ভাঙনের কবলে নিমিষে বিলীন হচ্ছে সে সব ফসল।
কাপাশিয়ার বাদামের চরের মো. আনছার আলীর ভাষ্য গত তিন দিনের ব্যবধানে তার ২ বিঘা জমির গমখেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তার দাবি ২ বিঘা জমির ফলন হলে আগামী ৬ মাসের খাদ্যের চাহিদা পূরুণ হতো। কিন্তু রাক্ষুসী তিস্তা কেড়ে নিল তার গমখেত। পরিজন নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসেছেন পরিবারটি। হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাহারুল ইসলাম জানান, গোটা ইউনিয়নটি তিস্তা নদী বেষ্টিত।

নদীর সঙ্গে সংগ্রাম করে চরের মানুষজন বসবাস করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। গত ২০ বছর ধরে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় অসংখ্য শাখা নদীতে পরিণত হয়েছে। সে কারণে অসময়ে ভাঙছে তিস্তা। এতে করে চরবাসী দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করার দাবি তার। 
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ ম-ল জানান, নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছর শতাধিক ঘরবাড়িসহ হাজারও একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বিষয়টি বহুবার সরকারের নজরে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে ভাঙন ঠেকানোর ব্যবস্থা না করার কারণে অসময়েও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রাশিদুল কবিরের ভাষ্য তিস্তার চরাঞ্চল এখন কৃষিতে একটি সম্ভাবনার জায়গা। তিস্তার চরকে রক্ষা করতে পারলে উত্তরাঞ্চল খাদ্য উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে। সে কারণে স্থায়ীভাবে তিস্তার চরকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চরবাসী বুকভরা আশা নিয়ে নানান ফসলের আবাদ করছে। কিন্তু ভাঙনের কবলে হরিয়ে যাচ্ছে সেইসব ফসলি জমি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, নদী ড্রেজিং, খনন ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তবে নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

কর্ণফুলীতে ব্লক স্থাপন শুরু
নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম থেকে জানান, বেতাগী ইউনিয়নে কর্ণফুলী নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঁচ স্পটের মোট ৯৮০ মিটার অংশ ব্লক স্থাপন করার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর মধ্য বেতাগীর গোলাম বেপারী হাট এলাকায় ৩৩০ মিটার, হীরমাই শাহর মাজার সংলগ্ন এলাকায় ৮০ মিটার, কাউখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় ১০০ মিটার, আবুল বশর মাস্টার বাড়ি এলাকা ১৫০ মিটার এবং গুণগুণিয়া বেতাগী কাঙালি শাহর মাজার এলাকায় ৩২০ মিটার অংশে ব্লক স্থাপন করা হবে। সম্প্রতি বেতাগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড গুণগুণিয়া বেতাগী এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে ব্লক স্থাপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে। 
বেতাগী ইউপি চেয়ারম্যান শফিউল আলম জানান, বেতাগীবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্লক বানানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং স্থাপন কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত একটানা কার্যক্রম চলবে। রাঙ্গুনিয়ার সংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিশেষ উদ্যোগে এই কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে। 
উল্লেখ্য রাঙ্গুনিয়ার সাংসদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের বিশেষ উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে কর্ণফুলীর ভাঙন প্রতিরোধে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মাধ্যমে চন্দ্রঘোনা থেকে বেতাগী ইউনিয়ন পর্যন্ত কর্ণফুলীর দুই পাড়ে ব্লক স্থাপন করা হয়েছে। এবার বৃহৎ ওই প্রকল্পে বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত যেতে না দিয়ে বেতাগীতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্লক স্থাপন কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলে জানা যায়।

বিষখালীতে নাব্য সংকট
নিজস্ব সংবাদদাতা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট থেকে জানান, মোরেলগঞ্জে বিষখালী নদীর মোহনায় পানগুছি নদীর প্রশাখা তার নাব্য হারিয়ে ভরাট হয়ে দীর্ঘ একযুগ ধরে খাদ্যগুদামে জেটি ঘাটে মালামাল লোড-আনলোডে ভোগান্তি এখন চরমে। জোয়ারের অপেক্ষায় সময় পার করছেন শ্রমিকরা।

নদীটির ১শ’ গজ পুনঃখননের দাবি স্থানীয়দের। পঞ্চকরণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. রাজ্জাক মজুমদার, চিংড়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলি আক্কাস বুলু, জিউধরা ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম, খাউলিয়া ইউপি  চেয়ারম্যান মাস্টার ছাইদুর রহমানসহ একাধিক চেয়ারম্যান বলেন, খাদ্য গুদামের এ ভোগান্তি লাঘবের জন্য জেটি ঘাটের সম্মুখ থেকে ১শ’ গজ দৈর্ঘ্য ও ৩০ গজ প্রস্থ খালটি পুনঃখনন করা হলে সমস্যার সমাধান হবে।  

এ ব্যাপারে মোরেলগঞ্জ খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা টোকেন ভৌমিক বলেন, খাদ্য গুদামের জেটিঘাটের মালামাল লোড-আনলোডের সমস্যার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। ভরাট হয়ে যাওয়া খালটি পুনঃখননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

×