ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থাভাবে মেধাবী তাপসের পড়ালেখা অনিশ্চিত

সংবাদদাতা, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: ২১:৪৩, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

অর্থাভাবে মেধাবী তাপসের পড়ালেখা অনিশ্চিত

কেশব চন্দ্র তাপস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় ১ম আর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৫তম স্থান করে নেন কেশব চন্দ্র তাপস। কিন্তু অর্থাভাবে ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না মেধাবী এই তাপস। ফলে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না তার। অর্থের কারণে স্বপ্ন যেন ফিকে হয়ে আসছে তার।
তাপস লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের অনিল চন্দ্র ও অঞ্জলি রানীর ছেলে।

বাবা অনিল চন্দ্র দিনমজুর। আর মা অঞ্জলি রানী গৃহিণী হলেও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি একপ্রকার শয্যাশায়ী। অঞ্জলি রানী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ায় কিছুই করতে পারেন না। আর এ কারণে রান্নাবান্নার কাজটিও সেরে থাকেন তাপস নিজেই। আর পিতা দিনমজুরি করে যা পান তা দিয়ে কোনোমতে চলে তাদের দিন।
সম্প্রতি তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাপসদের বাড়িতে দুটি টিনের ঘর। সেই ঘরেরও নেই ঠিকমতো বেড়া। এ কারণে তীব্র কুয়াশায় বিছানাসহ পরিধেয় কাপড়টিও ভিজে সাবাড় হয়ে যায়। গরুসহ তাপস একই ঘরে বাসও করেন। এমন দুঃখ-দুর্দশায় চলছে মেধাবী এই ছাত্রের জীবন কাহিনী। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মা-বাবা ও নিজের স্বপ্নপূরণে অনেক কষ্ট করছেন তাপস। বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান অনুষদে প্রথম স্থান অধিকার করলেও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারেননি। পরে প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদে ভর্তি হয়েছেন। তবে অর্থের অভাবে এখনো ক্লাসে যোগ দিতে পারেননি তাপস। মেধাবী শিক্ষার্থী তাপস বলেন, মা ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। শুধু বাবার দিনমজুরির আয় দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে।

আমরা দুই ভাই ও এক বোন। অর্থের অভাবে মাঝপথে বড় বোনের লেখাপড়া বন্ধ করে বিয়ে দেওয়া হয়। মা কয়েক বছর ধরে ব্রেস্ট ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। মায়ের দেখভালসহ রান্না করতে হয়। এত কষ্টের মাঝেও লেখাপড়া বন্ধ করিনি। এলাকার বিত্তবানদের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এখন টাকার অভাবে আমি আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারব কি না জানি না।

পড়ালেখাটা বোধহয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।  চলবলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু বলেন, অর্থাভাবে এরকম একটা মেধাবীর প্রদীপ নিভে যাবে এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি তার সমস্যার কথা শুনতে পেয়ে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করেছি। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, তিন মাস আগে তাপস আমার কাছে এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে বলে।

কিন্তু ভর্তির ফরম পূরণের টাকাসহ ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাওয়ার মতো উপায় ছিল না। ওই সময় আমি তাকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সামান্য কিছু সহযোগিতা করেছিলাম। ভবিষ্যতেও আমি তাপসের পাশে থাকব।

×