ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গামাটি জেলা

নৌকার প্রার্থী অনেকটাই নির্ভার কর্মী সংকটে অপর দু’জন

মোহাম্মদ আলী, রাঙ্গামাটি

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩

নৌকার প্রার্থী অনেকটাই নির্ভার কর্মী সংকটে অপর দু’জন

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গামাটি আসনে তিন এমপি প্রার্থী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন

প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাঙ্গামাটি আসনে তিন এমপি প্রার্থী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।
সোমবারে রিটার্নিং অফিসারের কক্ষ থেকে প্রতীক নিয়ে বের হয়ে তারা ভোটারদের কাছে ভোটভিক্ষা চাওয়া শুরু করেছেন। জেলার একমাত্র আসনে পাঁচ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জামা দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি তথা সন্তু লারমার দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও গত শুক্রবার দুপুরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। সোমবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী হারুনুর রশিদ মাতব্বরও একইভাবে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তার মনোনয়ন প্রত্যাহার দলের নেতাকর্মীরা কেউ মেনে নিতে পারেননি। তার একক সিদ্ধান্তে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় সোমবার দুপুরে বনরূপায় এলাকায় দলের নেতাকর্মীরা তার কুশপুতুল দাহ করেছেন। এই ঘটনায় সারাশহরে বিষয়টি নিয়ে টক অব দ্য টাউন-এ পরিণত হয়েছে।
নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ছয়বারের এমপি প্রার্থী দীপংকর তালুকদার, পাটের আঁশ প্রতীক নিয়ে তৃণমূল বিএনপির নেতা মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ও ছড়ি প্রতীক নিয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী অমর কুমার দে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। 
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯নং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা আসনে ছয়বারের মতো নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দীপংকর তালুকদার নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। এই বিষয়ে দীপংকর তালুকদার এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, রাঙ্গামাটি পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে নির্বাচনের আচরণবিধি অনুসারে নয়টি নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করেছেন। পরে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ইউনিয়নে অফিস করবেন বলে জানান। 
ভোটারের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, নৌকা এই দেশের স্বাধীনতা এনেছে। নৌকা জাতির পিতার প্রতীক । এ ছাড়া নৌকা এই দেশের আপামর জনসাধারণের প্রতীক। তাই এই নৌকাকে জিতিয়ে আনার জন্য তিনি সকল ভোটারের প্রতি আকুল আহ্বান জানান। তিনি আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকাকে জয় করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি নেতাকর্মীদেরকে সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একযোগে কাজ করারও আহ্বান জানান। 
এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতা চিংকিউ রোয়াজা, নিখীল কুমার চাকমা ও হাজি কামাল উদ্দিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও তারা নৌকা প্রতীককে সম্মান জানিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেননি। নৌকার একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দীপংকর তালুকদার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খানের কাছে তার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এই নিয়ে তিনি ৬ষ্ঠ বারের মতো নির্বাচন ফরম জমা দিলেন। এর আগে গত মঙ্গলবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। প্রতীক পেয়ে তিনি আগের চেয়ে অধিক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।

এই আসনে ২০১৪ সালে ঊষাতন তালুকদার আঞ্চলিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার তিনি তার মনোনয়ন প্রত্যাহার তরে নেন। অপর দুই প্রার্থী প্রতীক পেয়ে বসে নেই তারাও প্রচারে রাঙ্গামাটি শহর চষে বেড়াচ্ছেন। তবে তাদের ভোটার থাকলেও কর্মিবাহিনীর সংকট রয়েছে। সাস্কৃতিক জোটের বেশ পরিচিতি থাকলেও তৃণমূলের নেতার তেমন কোনো পরিচিতি পাওয়া যায়নি। তবে তাদেরও কিছু নীরব ভোটার রয়েছে। 

রাঙ্গামাটি আসনটি তিন পার্বত্য জেলার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে নানা কারণে এই আসনটি পার্বত্যবাসীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিন পার্বত্য জেলায় রূপান্তর করার পূর্বে রাঙ্গামাটি ছিল তিন জেলার প্রাণকেন্দ্র। ৬,০২৫ বর্র্গ কিমির আয়তনের এই আসনটি দেশের ৩০০ আসনের মধ্যে সবচেয়ে বড় আসন। 
১০টি উপজেলা, দুটি পৌরসভা ও ৫০টি ইউনিয়ন নিয়ে এই আসনটি গঠিত। সোয়া ছয় লাখ জনসংখ্যার এই জেলায় প্রায় পাঁচ লাখ ভোটার রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রূপলাবণ্যে পরিপূর্ণ কাপ্তাই লেকের স্বচ্ছ জলরাশি ও শ্যামল পাহাড়ঘেরা এই জনপদ বরাবরই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত। ঐতিহ্যগতভাবে এই আসনটি পার্বত্যবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির মূল নেতৃত্বের কারিগর জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা, ঊষাতন তালুকদার, চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, দীপংকর তালুকদার, গৌতম দেওয়ান ও মনি স্বপন দেওয়ান এই সব বলিস্ট নেতারা সকলেই রাঙ্গামাটির আসনের অধিবাসী। বিশাল এই জেলায় প্রচার চালানো বেশ কঠিন। শীতকে উপেক্ষা করে নৌকার কর্মীরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই এই পার্বত্য জেলার লোকেরা আগামীতে নৌকার প্রত্যাশায় রয়েছেন।

×