ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

খোলা আকাশের নিচে মানববেতর জীবন যাপন

ক্যান্সার আক্রান্ত জেলে ছিদ্দিকের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিলো মিধিলি 

হাসিব রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা, ভোলা 

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

ক্যান্সার আক্রান্ত জেলে ছিদ্দিকের শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিলো মিধিলি 

ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে বিধ্বস্ত ঘর। ছবি: জনকণ্ঠ

জেলে ছিদ্দিক। তার শরীরে বাসা বেধেছে মরণ ঘাতক ক্যান্সার রোগ। এই রোগের পিছনে তার যা ছিলো সব ব্যয় করেছেন। এখন ঠিক মতো তার চিকিৎসাই চলে না। স্থানীয়দের সহযোগিতা নিয়ে চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন বিপদের মধ্যে তার শেষ সম্বল এক মাত্র মাথা গোজার টিনের ঘরটিও শুক্রবার বিকালে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। 

এখন তার আর মাথা গোজার কোন ঠাঁই নেই। পরিবারের ৮ সদস্য ওই ঘরের নিচে চাপা পড়ে। তারা কোন রকমে প্রাণ রক্ষা করতে পারলেও ঘরের কোন মালামালই রক্ষা করতে পারেনি। এখন খোলা আকাশের নিচে পরিবারের সদস্য নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

শনিবার সকালে ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের চর আনন্দ গ্রামে গিয়ে সরেজমিনে এ অবস্থা দেখা যায়। ছিদ্দিক জানান, শুক্রবার দুপুরে তার স্ত্রী, সন্তান, পুত্র বন্ধু, নাতিসহ পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে ঝড়ের সময় ঘরেই ছিলেন। সকলেই ঘরের নিচে চাপা পরে। কোন রকমে সকালে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও ঘরের  সবকিছু চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। 

ঝড়ের পর দিন আজ শনিবার তাদের চুলাও জ্বলেনি। কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। পরিবারের সদস্যদের চোখমুখে দুশ্চিন্তা ছাপ। কি ভাবে তারা ঘর আবার তুলবে তা তাদের জানা নেই। তাদের ঘর মেরামতের কোন সামর্থ্য নেই। কিন্তু এখনো কোন সহয়তা পায়নি।  ভোলার সুন্দর খালি গ্রামেও এমন ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার দৃশ্য পাওয়া যায়।  এমন বহু বিধ্বস্ত পরিবার ভোলা জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে। 

ভোলায় শুক্রবার ২৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা সারা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড হয়। তাই অতিমাত্রায় বৃষ্টি হওয়ায় ভোলায় আসাম শীত কালিন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও আমন ধানেরও ক্ষতি হয়েছে। ভোলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের গুপ্ত মুন্সি গ্রামের রুহুল আমিন ব্যাপারী জানান, ৬ গন্ডা জমিতে আমন ধান আবাদ করেন। আর ৩ সপ্তাহ পর কাটার কথা। ২৪ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। এখন সব নষ্ট হয়ে পচে যাচ্ছে। 

একই এলাকার কৃষক মো. মাকসুদ কবিরাজ জানান, তিনি এক একর জমিতে শীতেকালিন আগাম লালশাক, পালন শাক, ধনেপাতা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি আবাদ করেন। তিনি ধার দেনা করে লাভের আশা সবজি আবাদ করেন। কিন্তু সব ফসল মাটির সাথে মিশে গেছে। তাদের মতো অসংখ্য কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে ভোলা কৃষি বিভাগ থেকে এখনো কৃষির ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিসংখ্যান জানা সম্ভব হয়নি।  

অপর দিকে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির আঘাতে উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য গাছপালা ভেঙেচরে উপরে আছে। বিদ্যুতের খুঁটি কাত হয়ে পরে আছে। তার ছিঁরে গেছে। অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ নেই। ভোলা ইলিশা ও রাজাপুরে মেঘনা নদীর তীরে ঘাটে বহু জেলের নৌকা ভেঙে বিধ্বস্ত হয়েছে। 

তজুমদ্দিনের মেঘনা নদীতে ঘূর্ণিঝড় মিধিলির প্রভাবে ৪ জেলেসহ একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এসময় তিনজনকে উদ্ধার করা গেলেও বাদশা মিয়া (৫০) নামের এক জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তজুমদ্দিন থানার ওসি মাকসুদুর রহমান মুরাদ।

ভোলা জেলা ত্রানও পুনবার্সন কর্মকর্তা এস এম দেলোয়ার হোসোইন সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিক ভাবে ভোলা জেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা  ৭৮ হাজার ১১১ জন। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, জেলায় ঝড়ে ৪২৬ টি আংশিক ও ৭৩টি ঘর সম্পূর্ণ ভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য আমরা দুর্গগ ব্যবস্থপনা ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে চাহিদা দিয়েছি। 

ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ভোলায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। পরবর্তীতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। 
 

 এসআর

আরো পড়ুন  

×