ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

মাদারীপুরে ৬৮ ডাকঘর চলছে ভাড়া ভবনে, নেই দরজা-জানালা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর

প্রকাশিত: ১৭:০০, ১৭ নভেম্বর ২০২৩

মাদারীপুরে ৬৮ ডাকঘর চলছে ভাড়া ভবনে, নেই দরজা-জানালা

জরাজীর্ণ ডাকঘর। ছবি: জনকণ্ঠ

মাদারীপুর জেলায় ৮৫ ডাকঘরের মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ১৭টি। বাকি ৬৮টি ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবনে। তাও আবার কোনোটির নেই দরজা-জানালা, আবার অধিকাংশ ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এসব ভবন ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ করা। এসব ডাকঘরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে কার্যক্রম। 

কর্মচারীদের অভিযোগ, রোদ-বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যেই বছরের পর বছর কার্যক্রম চালালেও চোখে পড়ছে না কর্তৃপক্ষের। যদিও দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বলছেন, নতুন ভবন নির্মাণে চিঠি দেয়া হয়েছে। কার্যত: কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি দীর্ঘদিনেও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমনে নির্মাণ করা হয়েছে মাদারীপুরের চরমুগরিয়া এলাকায় ‘উপ-ডাকঘর’। এখান থেকে যুগের পর যুগ ১৫টি ইউনিয়নের অধীনে ডাকঘরের কার্যক্রম হয়ে আসছে। একতলাবিশিষ্ট ভবনটিতে প্রতিদিনই খসে পড়ছে পলেস্তারা, রড বেরিয়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে কর্মচারীরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রতিমুহুর্তে বাড়ছে আতঙ্ক। 

এদিকে সদর উপজেলার কুলপদ্বীর ডাকঘরটিরও বেহাল দশা। নেই দরজা-জানালা। রোদ-বৃষ্টি ঝড়ের সঙ্গে রয়েছে চোরের আতঙ্ক। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সাথে করেই বাড়িতে নিয়ে যেতে হয় কর্মচারীদের। একই অবস্থা শহরের পুরান বাজার ডাকঘরসহ জেলার অধিকাংশ ডাকঘরের। কর্মচারীদের অভিযোগ, বার বার কর্তৃপক্ষকে বললেও মিলছে শুধু আশ্বাসের বানী। ফলে বাধ্য হয়েই দায়িত্ব পালন করছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর জেলায় ৮৫টি ডাকঘরের মধ্যে নিজস্ব ভবন রয়েছে মাত্র ১৭টি। বাকি ৬৮টি ডাকঘরের কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবনে। একটা সময় যোগাযোগের ক্ষেত্রে চিঠি আদান-প্রদানের জন্য ডাকঘর ব্যবহার করা হতো। ডিজিটাল যুগে এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমলেও অফিস-আদালতসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে এর ভুমিকা অপরিসীম। তাই জরাজীর্ণ ভবনগুলো নতুন নির্মাণ করা হলে কাজের গতি কয়েকগুন বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

চরমুগরিয়া ডাকঘরের মেইলকিপার নান্নু মিয়া সরদার জানান, দরজা-জানালা ভাঙ্গা। উপর থেকে একদিন বৃষ্টির পানি পড়লে, তিনদিনেও কমে না। জেলা প্রশাসক, এমপি, মন্ত্রী সবার কাছেই গেছি। কোন লাভ হয় নাই। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি।

চরমুগরিয়া ডাকঘরের রানার আতিকুর রহমান বলেন, ভয়াবহ পরিস্থিতি এখানে। ভবনের উপর থেকে ইটের খোঁয়া পড়তেই থাকে। এর থেকে আমার মুক্তি চাই।

পুরানবাজার ডাকঘরের মেইলকিপার নিরঞ্জন মন্ডল বলেন, অফিসের কাগজপত্র ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হতে পারে। এভাবে একটি ডাকঘর চলতে পারে না। আমরা নতুন ভবন  চাই।

কুলপদ্বী ডাকঘরের পোস্টম্যান বাবুল মোল্লা বলেন, শুধুমাত্র একটি টিনের ঘর আছে। তাও অফিস করার অযোগ্য। এখানে আমরা দুইজন লোক আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছি। অফিসটি নিরাপদ হলে আমরা সেবার গতি আরো বাড়াতে পারি। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র অনেক সময় বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। আবার পরদিন সকালে অফিসে সেই কাগজপত্র নিয়ে আসি।

মাদারীপুর প্রধান ডাকঘরের পরিদর্শক মো. জিহাদুল ইসলাম জানান, নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে আঞ্চলিক অফিসকে। নতুন ভবন নির্মাণ হলে আর কোন কষ্টই থাকবে না। হয়তো শিগগিরই আলোর মুখ দেখা যাবে।
 

এসআর

×