ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

ফরিদপুরে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামীকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:০৩, ১৬ আগস্ট ২০২৩; আপডেট: ০০:১০, ১৬ আগস্ট ২০২৩

ফরিদপুরে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে স্বামীকে ঢাকায় গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব

হাবুল বেপারী

ফরিদপুর সদরপুরে পরকীয়ার সন্দেহে দুলাভাইকে সঙ্গে নিয়ে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে ঘাতক স্বামী হাবুল বেপারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকার তুরাগ কামারপাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাব জানায়, পরকীয়ার সন্দেহে স্ত্রী রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে স্বামী হাবুল। হাবুল তার দুলাভাই সূর্য মোল্লার সঙ্গে এই হত্যার পরিকল্পনা করে। রাবেয়ার প্রতি সূর্য মোল্লার আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল। রাবেয়াকে মেরে ফেললে আগের ঋণের টাকা ফেরত দিতে হবে না- এই চিন্তা করে হাবুলের কথা অনুযায়ী রাবেয়াকে হত্যায় সহযোগিতা করতে রাজি হয় এবং তাকে হত্যা করে।
মঙ্গলবার কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ১৩ আগস্ট ফরিদপুর সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী এলাকায় সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে রাবেয়া বেগম নামে এক গৃহবধূর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই বাদী হয়ে ফরিদপুর সদরপুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হাবুল গত সাত বছর আগে রাবেয়া বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর থেকেই রাবেয়ার বাবার বাড়িতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিল হাবুল। গত কয়েক মাস ধরেই তার স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ ছিল। মূলত সে তার স্ত্রী রাবেয়াকে পরকীয়ার ব্যাপারে সন্দেহ করত। এ ছাড়াও হাবুলের স্থায়ী কোনো চাকরি ছিল না। সে ফার্নিচার দোকানে রং মিস্ত্রির কাজ করত। যার ফলে তার উপার্জন কম ছিল। রাবেয়া বেসরকারি একটি এনজিওতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করত বলে জানা যায়। হাবুলের উপার্জন কম থাকায় প্রায়ই সে স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের বিভিন্ন খরচের জন্য টাকা চাইত। যেহেতু রাবেয়া চাকরির উপার্জিত অর্থ দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনার খরচসহ সংসারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করত এজন্য সে তার স্বামীকে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করত। যার ফলে রাবেয়ার প্রতি হাবুলের পরকীয়ার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। হাবুলের দুলাভাই সূর্য মোল্লা বিভিন্ন সময়ে রাবেয়ার কাছ থেকে বেশকিছু টাকা ধার নিয়েছিল। ধার করা টাকা পরিশোধের জন্য রাবেয়া চাপ প্রয়োগ করলে তার সঙ্গে কথা কাটাকাটি এবং ঝগড়া হতো।
খন্দকার আল মঈন বলেন, একপর্যায়ে হাবুল ক্ষোভ ও পরকীয়ার সন্দেহে রাবেয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। হাবুল তার দুলাভাই সূর্য মোল্লাকে পরিকল্পনার বিষয়টি জানায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১১ আগস্ট রাতে হাবুলের দুলাভাই ভিকটিমের বাড়িতে যায় এবং বাসার সবাই একসঙ্গে রাতের খাবার খায়। রাত আনুমানিক ১০টা ৩০ মিনিটে সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়ে। হাবুল, সূর্য মোল্লা ও রাবেয়া চেয়ারে বসে আলাপ করছিল। একপর্যায়ে হাবুল সুযোগ বুঝে অতর্কিতে রাবেয়ার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে। হাবুলের দুলাভাই ভিকটিমের হাত পেছন থেকে চেপে ধরে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যাকা-ের বিষয়টি কেউ যেন জানতে না পারে এজন্য ভিকটিমের লাশ ঘরের পেছনের দরজা দিয়ে বের করে ঘরের পেছনে টয়লেটের সেপটিক ট্যাঙ্কের ভেতর ফেলে দেয়। হাবুলের দুলাভাই রাতেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায়। হত্যাকা-ের পরের দিন সকালে ভিকটিমের মা হাবুলের কাছে রাবেয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে রাবেয়া এনজিও’র কাজে অফিসে গেছে বলে জানায় এবং তার শাশুড়িকে সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে। একপর্যায়ে হাবুল তার শাশুড়িকে জানায়, জরুরি কাজে তাকে ঢাকা যেতে হবে এবং সে কৌশলে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করে। হাবুল আত্মগোপনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়ার আগে সে বেশকিছু স্বর্ণ ও রূপার অলঙ্কার এবং গচ্ছিত টাকা নিয়ে রাজধানীর তুরাগ থানার কামারপাড়া এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়।

×